পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిలిన রবীন্দ্র-রচনাবলী নিয়াছিল। এবার মিলনের দিন বাপ যেমনি তাহার চিবুক ধরিয়া মুখটি তুলিয়া ধরিলেন অমনি হৈমর চোখের জল আর মান মানিল না। বাপ একটি কথা বলিতে পারিলেন না, জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করিলেন না কেমন আছিস । আমার শ্বশুর তাহার মেয়ের মুখে এমন একটা-কিছু দেখিয়াছিলেন যাহাতে তাহার বুক ফাটিয়া গেল । হৈম বাবার হাত ধরিয়া তাহাকে শোবার ঘরে লইয়া গেল। অনেক কথা যে জিজ্ঞাসা করিবার আছে। তাহার বাবারও যে শরীর ভালো দেখাইতেছে না। বাবা জিজ্ঞাসা করিলেন, “বুড়ি, আমার সঙ্গে যাবি ?” হৈম কাঙালের মতো বলিয়া উঠিল, “যাব ।” বাপ বলিলেন, “আচ্ছা, সব ঠিক করিতেছি ।” শ্বশুর যদি অত্যন্ত উদবিগ্ন হইয়া না থাকিতেন তাহা হইলে এ-বাড়িতে ঢুকিয়াই বুঝিতে পারিতেন, এখানে তাহার আর সেদিন নাই। হঠাৎ তাহার আবির্ভাবকে উপদ্রব মনে করিয়া বাবা তো ভালো করিয়া কথাই কহিলেন না। আমার শ্বশুরের মনে ছিল তাহার বেহাই একদা তাহাকে বারবার করিয়া আশ্বাস দিয়াছিলেন যে, যখন র্তাহার খুশি মেয়েকে তিনি বাড়ি লইয়া যাইতে পরিবেন। এ সত্যের অন্যথা হইতে পারে সে কথা তিনি মনেও আনিতে পারেন নাই । বাবা তামাক টানিতে টানিতে বলিলেন, "বেহাই, আমি তো কিছু বলিতে পারি না, একবার তাহলে বাড়ির মধ্যে—” বাড়ির-মধ্যের উপর বরাত দেওয়ার অর্থ কী আমার জানা ছিল। বুঝিলাম, কিছু হইবে না। কিছু হইলও না । বউমার শরীর ভালো নাই ! এত বড়ো অন্যায় অপবাদ ! শ্বশুরমশায় স্বয়ং একজন ভালো ডাক্তার অনিয়া পরীক্ষা করাইলেন। ডাক্তার বলিলেন, “বায়ু-পরিবর্তন আবশ্যক, নহিলে হঠাৎ একটা শক্ত ব্যামো হইতে পারে।” বাবা হাসিয়া কহিলেন, “হঠাৎ একটা শক্ত ব্যামো তো সকলেরই হইতে পারে। এটা কি আবার একটা কথা ।” আমার শ্বশুর কহিলেন, “জানেন তো, উনি একজন প্রসিদ্ধ ডাক্তার, উহার কথাটা কি—” বাবা কহিলেন, “আমন ঢের ডাক্তার দেখিয়াছি। দক্ষিণার জোরে সকল পণ্ডিতেরই কাছে সব বিধান মেলে এবং সকল ডাক্তারেরই কাছে সব রোগের সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ।” 發 এই কথাটা শুনিয়া আমার শ্বশুর একেবারে স্তব্ধ হইয়া গেলেন। হৈম বুঝিল,