পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব \מט\(ס কনেীজি—ঘোড়মকো, ব্রজভাষা—ঘোড়েীকে অথবা ঘোড়নিকেী, মাড়োয়ারি— ঘোড়ারো, মেৱারি-ঘোড়াকে, গঢ়ৱালি—ঘোড়ে কো, অৱধি—ঘোড়ৱনকর, রিৱাই—ঘাড়নকর, ভোজপুরি-ঘোড়নকি, মাগধী—ঘোড়নকের, মৈথিলী— ঘোড়নিক ঘোড়নিকর । উদ্ধৃত দৃষ্টান্তগুলিতে দেখা যাইতেছে, কী কে কের কর প্রভৃতি ষষ্ঠ বিভক্তি চিহ্নের বহুবচন নাই। বহুবচনের চিহ্ন মূল শব্দের সহিত সামুনাসিকরূপে যুক্ত। অপভ্রংশ প্রাকৃতে ষষ্ঠীর বহুবচনে হং হুং হিং বিভক্তি হয়। সংস্কৃত নরাণাং কৃতক: শব্দ অপভ্রংশ প্রাকৃতে নরহং কেরও এবং হিন্দিতে নরোকো হয়। সংস্কৃত ষষ্ঠী বহুবচনের আনাং হিন্দিতে বিচিত্র সামুনাসিকে পরিণত হইয়াছে। বাংলায় এ নিয়মের ব্যত্যয় হইবার কারণ পাওয়া যায় না। আমাদের মতে সম্পূর্ণ ব্যত্যয় হয় নাই। নিম্নে তাহার আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া গেল। হিন্দিতে কর্তৃকারকে একবচন বহুবচনের ভেদচিহ্ন লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। বিশেষরূপে বহুবচন বুঝাইতে হইলে লোগ গণ প্রভৃতি শব্দ অমুযোজন করা হয়। প্রাচীন বাংলারও এই দশা ছিল, পুরাতন কাব্যে তাহার প্রমাণ আছে ; দেখা গিয়াছে, সব সকল প্রভৃতি শব্দের অমুযোজনাদ্বারা বহুবচন নিম্পন্ন হইত। কিন্তু হিন্দিতে দ্বিতীয়া তৃতীয় প্রভৃতি বিভক্তির চিহ্ন যোগের সময় শব্দের একবচন ও বহুবচন রূপ লক্ষিত হয় ; যথা, ঘোড়েকো— একটি ঘোড়াকে, ঘোড়েণকো— অনেক ঘোড়াকে । ঘোড়ে একবচনরাপ এবং ঘোড়ে বহুবচনরাপ । পূর্বে এক স্থলে উল্লেখ করিয়াছি যে, প্রাকৃত একবচন ষষ্ঠীবিভক্তিচিহ্ন হে হি স্থলে বাংলায় একার দেখা যায় ; যথা অপভ্রংশ প্রাকৃত— ঘরহে, বাংলায় ঘরে । হিন্দিতেও এইরূপ ঘটে। ঘোড়ে শব্দ তাহার দৃষ্টান্ত । প্রাকৃতের প্রথা অনুসারে প্রথমে গৌড়ীয় ভাষায় বিভক্তির মধ্যে ষষ্ঠীবিভক্তিচিহ্নই একমাত্র অবশিষ্ট ছিল ; অবশেষে ভাবপরিস্ফুটনের জন্য সেই ষষ্ঠীবিভক্তির সহিত সংলগ্ন করিয়া ভিন্ন ভিন্ন কারকজাপক শব্দযোজনা প্রবর্তিত হইল । h বাংলায় এই নিয়মের লক্ষণ একেবারে নাই তাহা নহে। ‘হাতর’ না বলিয়া বাংলায় হাতের বলে, ‘ভাইর’ না বলিয়া ভাইয়ের বলে, ‘মুখতে না বলিয়া মুখেতে এবং বিকল্পে পাতে এবং পয়েতে বলা হইয়া থাকে। - প্রথমে, হাতে ভাইয়ে মুখে পায়ে রূপ করিয়া তাহাতে র তে প্রভৃতি বিশেষ বিভক্তি যোগ হইয়াছে। পূর্বেই বলা হইয়াছে এই একার প্রাকৃত একবচন ষষ্ঠীবাচক হি হে-র অপভ্রংশ।