পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনোদিনী চমকিয়া মাথায় কাপড় টানিয়া উঠিবার উপক্রম করিল। আশা তাহার হাত চাপিয়া ধরিল । * মহেন্দ্ৰ হাসিয়া কহিল, “হয় আপনি বস্থন আমি যাই, নয় আপনিও বক্ষন আমিও বসি ।” বিনোদিনী সাধারণ মেয়ের মতো আশার সহিত হাত-কাড়াকড়ি করিয়া মহাকোলাহলে লজ্জার ধুম বাধাইয়া দিল না। সহজ স্বরেই বলিল, “কেবল আপনার অনুরোধেই বসিলাম, কিন্তু মনে মনে অভিশাপ দিবেন না।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “এই বলিয়া অভিশাপ দিব, আপনার যেন অনেকক্ষণ চলৎশক্তি না থাকে ।* বিনোদিনী কহিল, “সে অভিশাপকে আমি ভয় করি না । কেননা, আপনার অনেক ক্ষণ খুব বেশি ক্ষণ হইবে না। বোধ হয়, সময় উত্তীর্ণ হইয়া আসিল ।” বলিয়া আবার সে উঠিবার চেষ্টা করিল । আশা তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল, “মাথা খাও, আর একটু বসে৷ ” S8 আশা জিজ্ঞাসা করিল, “সত্য করিয়া বলে, আমার চোখের বালিকে কেমন লাগিল ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, "মন্দ নয়।” আশা অত্যস্ত ক্ষুণ্ণ হইয়া কহিল, “তোমার কাউকে আর পছন্দই হয় না ।” মহেন্দ্র । কেবল একটি লোক ছাড়া । আশা কহিল, ”আচ্ছ, ওর সঙ্গে আর একটু ভালো করিয়া আলাপ হউক, তার পরে বুঝিব, পছন্দ হয় কি না ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “আবার আলাপ । এখন বুঝি বরাবরই এমনি চলিবে ।” আশা কহিল, “ভদ্রতার খাতিরেও তো মানুষের সঙ্গে আলাপ করিতে হয়। এক দিন পরিচয়ের পরেই যদি দেখাশুনা বন্ধ কর, তবে চোখের বালি কী মনে করিবে বলো দেখি । তোমার কিন্তু সকলই আশ্চর্য । আর কেউ হইলে আমন মেয়ের সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য সাধিয়া বেড়াইত ; তোমার যেন একটা মস্ত বিপদ উপস্থিত হইল।” অন্ত লোকের সঙ্গে তাহার এই প্রভেদের কথা শুনিয়া মহেন্দ্ৰ ভারি খুশি হইল । কহিল, "আচ্ছা বেশ তো । ব্যস্ত হইবার দরকার কী । আমার তো পালাইবার