পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8 సె(t মহেন্দ্ৰ হাসিয়া কহিল, “ইহারই মধ্যে অধিকার সাব্যস্ত হইয়া গেছে ? অাজ তোমার নূতন নামকরণ করা যাক—বিনোদ-বিহারী ।” + বিহারী অপমানের মাত্রা চড়িতে দেখিয়া মহেঞ্জের হাত চাপিয়া ধরিল। কহিল, "মহেন্দ্র, বিনোদিনীকে আমি বিবাহ করিব, তোমাকে জানাইলাম, অতএব এখন হইতে সংযতভাবে কথা কও ” - -- শুনিয়া মহেন্দ্র বিস্ময়ে নিস্তব্ধ হইয়া গেল, এবং বিনোদিনী চমকিয়া উঠিল—বুকের । মধ্যে তাহার সমস্ত রক্ত তোলপাড় করিতে লাগিল । বিহারী কহিল, তোমাকে আর-একটি খবর দিবার আছে—তোমার মাতা মৃত্যুশয্যায় শয়ান, তাহার বাচিবার কোনো আশা নাই । আমি আজ রাজের । গাড়িতেই যাইব— বিনোদিনীও আমার সঙ্গে ফিরিবে ।” so বিনোদিনী চমকিয়া উঠিল, কহিল, “পিসিমার অসুখ ?” বিহারী কহিল, “সারিবার অস্থখ নহে। কখন কী হয়, বলা যায় না।” মহেন্দ্র তখন আর-কোনো কথা না বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । বিনোদিনী তখন বিহারীকে বলিল, “যে-কথা তুমি বলিলে, তাহা তোমার মুখ দিয়া কেমন করিয়া বাহির হইল। এ কি ঠাট্টা।” - বিহারী কহিল, “না, আমি সত্যই বলিয়াছি, তোমাকে আমি বিবাহ করিব।” বিনোদিনী । - এই পাপিষ্ঠাকে উদ্ধার করিবার জন্ত । বিহারী । না । আমি তোমাকে ভালোবাসি বলিয়া, শ্রদ্ধা করি বলিয়া । বিনোদিনী । এই আমার শেষ পুরস্কার হইয়াছে। এই যেটুকু স্বীকার করিলে ইহার বেশি আর আমি কিছুই চাই না। পাইলেও তাহা থাকিবে না, ধর্ম কখনো তাহা সহ করিবেন না । বিহারী । কেন করিবেন না। বিনোদিনী । ছি ছি, এ-কথা মনে করিতে লজ্জা হয় । আমি বিধবা, আমি নিন্দিতা, সমস্ত সমাজের কাছে আমি তোমাকে লাঞ্ছিত করিব, এ কখনো হইতেই পারে না। ছিছি, এ-কথা তুমি মুখে আনিয়ো না । বিহারী। তুমি আমাকে ত্যাগ করিবে ? বিনোদিনী । ত্যাগ করিবার অধিকার আমার নাই । তুমি গোপনে অনেকের অনেক ভালো কর—তোমার একটা কোনো ত্ৰতের একটা-কিছু ভার আমার উপর সমর্পণ করিয়ো, তাহাই বহন করিয়া আমি নিজেকে তোমার সেবিকা বলিয়া গণ্য করিব। কিন্তু ছিছি, বিধবাকে তুমি বিবাহ করিবে । তোমার ঔদার্ধে সব সম্ভব