পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী "לףס ইহার আর-এক স্থবিধা এই যে, ধ্বনিবৈচিত্র্য এত সহজে এত বর্ণনাবৈচিত্র্যের অবতারণা করিতে পারে যে, তাহ অর্থবদ্ধ শব্দদ্বারা প্রকাশ করা দুঃসাধ্য। সঁ৷ করিয়া গেল, এবং গটগট করিয়া গেল, উভয়েই দ্রুতগতি প্রকাশ করিতেছে ; অথচ উভয়ের মধ্যে যে-পার্থক্য আছে, তাহ অন্য উপায়ে প্রকাশ করিতে গেলে হতাশ হইতে হয় । தி এক কাটা সম্বন্ধে কত বিচিত্র বর্ণনা আছে। কচ করিয়া, কচাং করিয়া, কচকচ করিয়া কাটা ; কচকচ কাটিয়া যাওয়া ; কুচ করিয়া, কট করিয়া, কটাং করিয়া, কটাস করিয়া, ক্যাচ করিয়া, ঘ্যাচ ঘ্যাচ করিয়া, ঝড়াং করিয়া, এই-সকল ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগে কাটা সম্বন্ধে যত প্রকার বিচিত্র ভাবের উদ্রেক করে, তাহার সূক্ষ্ম প্রভেদ ভাষাস্তরে বিদেশীর নিকট ব্যক্ত করা অসম্ভব । ইংরেজিতে গমনক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন ছবির জন্য বিচিত্র শব্দ আছে— creep crawl sweep totter waddle ইত্যাদি । বাংলায় আভিধানিক শব্দে চলার বিচিত্র ছবি পাওয়া যায় না ; ছবি খুজিতে হইলে আমাদের অভিধানতিরস্কৃত শব্দগুলি ঘাটিয়া দেখিতে হয় । খটখট করিয়া, ঘটঘট করিয়া, খুটখুট করিয়া, খুরথুর করিয়া, খুটুস খুটুস করিয়া, গুটগুট করিয়া, ঘটর ঘটর করিয়া, ট্যাঙস ট্যাঙস করিয়া, থপথপ করিয়া, থাপাস থাপাস করিয়া, ধদ্ধড় করিয়া, ধা পা করিয়া, সন সন করিয়া, সুড় স্থড় করিয়া, স্কট স্কট করিয়া, স্থড্রং করিয়া, হন হন করিয়া, হুড়মুড় করিয়া— চলার এত বিচিত্র অথচ সুস্পষ্ট ছবি কোথায় পাওয়া যাইবে । চল৷ কাটা প্রভৃতি ক্রিয়ার সহিত ধ্বনির সম্বন্ধ থাকা আশ্চর্য নহে ; কারণ গতি হইতে শব্দ উৎপন্ন হইয়া থাকে। কিন্তু যে-সকল ছবি ধ্বনির সহিত দূরসম্পর্কবিশিষ্ট, তাহাও বাংলাভাষায় ধ্বন্যাত্মক শব্দে ব্যক্ত হয় ; যেমন পাতলা জিনিসকে ফিনফিন ফুরফুর ধ্বনির দ্বারা ব্যক্ত করা হয়। পাতলা ফিনফিন করছে, বলিলে এ কথা কেহ বোঝে না যে, পাতলা বস্তু বাস্তবিক কোনো শব্দ করিতেছে, অথচ তদ্বারা তনু পদার্থের তমুত্ব স্ব স্পষ্ট হইয়া উঠে। ছিপছিপে কথাটাও ওইরূপ ; সরু বেতই বাতাসে আহত হইয়। ছিপছিপ শব্দ করে, মোটা লাঠি করে না, এইজন্য ছিপছিপে লোক বস্তুত কোনো শব্দ না করিলেও ছিপছিপে শব্দ দ্বারা তাহার দেহের বিরলতা সহজেই মনে আসে। লকলকে লিকলিকে লিংলিঙে শব্দও এই শ্রেণীর । কিন্তু ধ্বনির সহিত যে-সকল ভাবের দূর সম্বন্ধও নাই, তাহাও বাংলায় ধ্বনির দ্বারা ব্যক্ত হয়। যেমন কনকনে শীত ; কনকন ধ্বনির সহিত শীতের কোনো সম্বন্ধ খুজিয়া পাওয়া যার না। শীতে শরীরে যে বেদন বোধ হয়, অামাদের কল্পনার কোনো