পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ২১৩ চন্দ্র, প্রত্যেক দিনটির সঙ্গে সকালে সন্ধে দুটি-একটি করে তেমন-তেমন মিষ্টি স্বর যদি লাগে, তা হলে জীবনের এক-একটা দিন এক-এক পাত্ৰ মদের মতো এক চুমুকে নিঃশেষ করে ফেলা যায়— চন্দ্রকান্ত । এখন বুঝি কেবল মুখ সিটুকে চিরেতা খাচ্ছিস । বিনোদবিহারী। তা নয় তো কী । তুমি যে দেখে নিতে বলছ, দেখব কাকে । মানুষ কি চোখ চাইলেই দেখা যায়। দৈবাং হাতে ঠেকে । তুমিও যেমন । রাখে। জীবনট। বাজি— চক্ষু বুজে দান তুলে নাও, তার পর হয় রাজা নয় ফকির— একেই তো বলে খেলা । চন্দ্রকাস্ত । উঃ ! কী সাহস ! তোমার কথা শুনলে আমার মতো মরচে-পড়া বিবাহিত লোকেরও বুক সাত হাত হয়ে ওঠে— ফের আর-একটা বিয়ে করতে ইচ্ছে করে । সত্যি, তোমাদের দেখে হিংসে হয়। একেবারে আঠারো আনা কবিত্ব করে নিলে হে । না দেখে বিয়ে তো আমরাও করেছি কিন্তু তার মধ্যে এমনতরো নেশা ছিল না । এ যে একেবারে দেখতে-না-দেখতে এক মুহূর্তে ভেঁা হয়ে উঠল ! নিমাই । তা বলি, বিয়ে যদি করতে হয় নিজে না দেখে করাই ভালো । যেমন ডাক্তারের পক্ষে নিজের কিংবা আত্মীয়ের চিকিৎসে করাটা কিছু নয়। কিন্তু বন্ধুবান্ধবদের দেখে শুনে নেওয়া উচিত। মেয়েটি কে বলো তো হে চন্দরদী। চন্দ্রকাস্ত। আমাদের নিবারণবাবুর বাড়িতে থাকেন, নাম কমলমুখী । আদিত্যবাবু আর নিবারণবাবু পরমবন্ধু ছিলেন। আদিত্য মরবার সময় মেয়েটিকে নিবারণবাবুর হাতে সমর্পণ করে দিয়ে গেছেন। নিবারণবাবু লোকটি কিছু নতুন ধরনের। যেমন কাচাপাকা মাথা, তেমনি কাচাপাকা স্বভাবের মানুষটিও । অনেক বিষয়ে সেকেলে অথচ অনেকগুলো একেলে ভাবও আছে । মেয়েটির বয়স হয়েছে, শুনেছি লেখাপড়াও কিছু অতিরিক্ত রকম শেখানো হয়েছে। বিস্তু যখন মুখনাড়া খাবেন তার মধ্যে ব্যাকরণের ভুল বের করতে পারবেন না । মনে করে, আমার গৃহিণী যখন উক্ত কার্যে প্রবৃত্ত হন তখন প্রায়ই তার দুটো-চারটে গ্রাম্যতা-দোষ সংশোধন করে टिङ इम्न, किङ्खु নিমাই । যাই হোক, একবার দেখে আসতে হচ্ছে । বিনোদবিহারী । খেপেছ নিমাই ! সে তো আর কচি মেয়ে নয় যে, ক-টি দাত উঠেছে গুনতে যাবে কিংবা বর্ণপরিচয়ের পরীক্ষা নেবে। নিমাই। তা বটে, গিয়ে নিজেই অপ্রতিভ হয়ে বসে থাকতে হবে, ভয় হবে পাছে আমাকেই একজামিন করে বসে ।