পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8eb রবীন্দ্র-রচনাবলী বলিয়া বৃদ্ধ ঘরের মধ্যে প্রবেশ কুরিয়া ভিতর হইতে দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল । অল্পাত অভূক্ত মলিনবস্ত্র বিনোদিনী শূন্তহস্তে গাড়িতে গিয়া উঠিল । মহেক্স যখন গাড়িতে উঠিতে গেল, বিনোদিনী কহিল, “ন, স্টেশন দূরে নয়, তুমি হাটিয়া যাও।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “তাহা হইলে গ্রামের সকল লোক আমাকে দেখিতে পাইবে।” বিনোদিনী কহিল, “এখনো তোমার লজ্জার বাকি আছে ?” বলিয়া গাড়ির দরজা বন্ধ করিয়া বিনোদিনী গাড়োয়ানকে বলিল, “স্টেশনে চলো ।” - গাড়োয়ান জিজ্ঞাসা করিল, “বাৰু যাইবে না ?” মহেন্দ্র একটু ইতস্তত করিয়া আর যাইতে সাহস করিল না। গাড়ি চলিয়া গেল। মহেন্দ্র গ্রামের পথ পরিত্যাগ করিয়া মাঠের পথ দিয়া ঘুরিয়া নতশিরে স্টেশনের অভিমুখে চলিল । তখন গ্রামবধূদের স্নানাহার হইয়া গেছে । কেবল যে-সকল কর্মনিষ্ঠ প্রৌঢ়া গৃহিণী বিলম্বে অবকাশ পাইয়াছে, তাহারাই গামছা ও তেলের বাটি লইয়া আম্রমুকুলেআমোদিত ছায়াস্নিগ্ধ পুষ্করিণীর নিভৃত ঘাটে চলিয়াছে। \ల్ఫి মহেন্দ্র কোথায় নিরুদ্দেশ হইয়া গেল, সেই আশঙ্কায় রাজলক্ষ্মীর আহারনিদ্রা বন্ধ । সাধুচরণ সম্ভব-অসম্ভব সকল স্থানেই তাহাকে খুজিয়া বেড়াইতেছে— এমন সময় মহেন্দ্র বিনোদিনীকে লইয়া কলিকাতায় ফিরিয়া আসিল । পটলডাঙার বাসায় তাহাকে রাখিয়া রাত্রে মহেন্দ্র তাহার বাড়িতে আসিয়া পৌছিল। মাতার ঘরে মহেন্দ্র প্রবেশ করিয়া দেখিল, ঘর অন্ধকারপ্রায়, কেরোসিনের লণ্ঠন আড়াল করিয়া রাখা হইয়াছে । রাজলক্ষ্মী রোগীর ন্যায় বিছানায় শুইয়া আছেন এবং আশা পদতলে বসিয়া আস্তে আস্তে র্তাহার পায়ে হাত বুলাইয়া দিতেছে । এতকাল পরে গৃহের বধূ শাশুড়ীর পদতলের অধিকার পাইয়াছে। মহেন্দ্ৰ আসিতেই আশা চকিত হইয়া উঠিয়া ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল । মহেন্দ্র বলপূর্বক সর্বপ্রকার দ্বিধা পরিত্যাগ করিয়া কহিল, “মা, এখানে আমার পড়ার সুবিধা হয় না ; আমি কলেজের কাছে একটা বাসা লইয়াছি ; সেইখানেই থাকিব ।” রাজলক্ষ্মী বিছানার প্রান্তে অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া মহেক্সকে কছিলেন, “মহিন, একটু বোস।”