পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ዓwይ রবীন্দ্র-রচনাবলী “জেলে যাবার রাস্ত এত অসংখ্য এবং আজকাল এত সহজ যে কী করে জেলে না যাওয়া যায় সেই পরামর্শই কঠিন হয়ে উঠল। এ যুগে গোরার বাশি ঘরে টিকতে क्षेिळ ब ।” “না, আমি ঠাট্টা করছি নে, অনেক ভেবে দেখলুম আমার মুক্তি ওইখানেই।” "ভালো করে খুলে বলে তোমার মনের কথাটা ।” “বলছি সব কথা । সম্পূর্ণ বুঝতে পারতে, যদি আদিতদার মুখখান দেখতে পেতে।” “আভাসে কিছু দেখেছি।” “আজ বিকেলবেলায় একলা ছিলেম বারান্দায়। আমেরিক থেকে ফুলগাছের ছবি-দেওয়া কেটালগ এসেছে, দেখছিলেম পাতা উলটিয়ে ; রোজ বিকেলে সাড়ে চারটার মধ্যে চা খাওয়া সেরে আদিতদা আমাকে ডেকে নেন বাগানের কাজে । আজ দেখি অন্যমনে বেড়াচ্ছেন ঘুরে ঘুরে ; মালীরা কাজ করে যাচ্ছে তাকিয়েও দেখছেন না। মনে হল আমার বারান্দার দিকে আসবেন বুঝি, দ্বিধা করে গেলেন ফিরে । আমন শক্ত লম্বা মানুষ, জোরে চলা, জোরে কাজ, সবদিকেই সজাগ দৃষ্টি, কড়া মনিব অথচ মুখে ক্ষমার হাসি ; আজ সেই মানুষের সেই চলন নেই, দৃষ্টি নেই বাইরে, কোথায় তলিয়ে আছেন মনের ভিতরে। অনেকক্ষণ পরে ধীরে ধীরে এলেন কাছে। অন্যদিন হলে তখনই হাতের ঘড়িটা দেখিয়ে বলতেন, সময় হয়েছে, আমিও উঠে পড়তুম। আজ তা না বলে আস্তে আস্তে পাশে চৌকি টেনে নিয়ে বসলেন। বললেন, ‘কেটালগ দেখছ বুঝি ? আমার হাত থেকে কেটালগ নিয়ে পাতা ওলটাতে লাগলেন । কিছু যে দেখলেন তা মনে হল না। হঠাৎ একবার আমার মুখের দিকে চাইলেন, যেন পণ করলেন আর দেরি না করে এখনই কী একটা বলাই চাই। আবার তখনই পাতার দিকে চোখ নামিয়ে বললেন, ‘দেখেছ সরি, কতবড়ো ন্যাসটাশিয়াম। কণ্ঠে গভীর ক্লান্তি । তার পর অনেকক্ষণ কথা নেই, চলল পাতা ওলটানে। আর-একবার হঠাৎ আমার মুখের দিকে চাইলেন, চেয়েই ধণ করে বই বন্ধ করে আমার কোলের উপর ফেলে দিয়ে উঠে পড়লেন। আমি বললেম, যাবে না বাগানে ? আদিতদা বললেন, ‘ন ভাই বাইরে বেরতে হবে, কাজ আছে’ বলেই তাড়াতাড়ি নিজেকে যেন ছিড়ে নিয়ে চলে গেলেন।” “আদিতদা তোমাকে কী বলতে এসেছিলেন; কী আন্দাজ কর তুমি।” : “বলতে এসেছিলেন, আগেই ভেঙেছে তোমার এক বাগান, এবার হুকুম এল, তোমার কপালে আর-এক বাগান ভাঙবে ।” Q