পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उञांच्चन्नंखि (t): প্রস্তুত থাকিবার ভাব হইতে জনসাধারণকে ষে একটি একীভূত নিবিড় অভিব্যক্তি দান করে, তাহাই নেশন। ইহার পশ্চাতে একটি অতীত আছে বটে, কিন্তু তাহার প্রত্যক্ষগম্য লক্ষণটি বর্তমানে পাওয়া যায়। তাহা আর কিছু নহে— সাধারণ সম্মতি, সকলে মিলিয়া একত্রে এক জীবন বহন করিবার স্থম্পষ্টপরিব্যক্ত ইচ্ছা । রেন বলিতেছেন, আমরা রাষ্ট্ৰতন্ত্র হইতে রাজার অধিকার ও ধর্মের আধিপত্য নির্বাসিত করিয়াছি, এখন বাকি কী রহিল ? মাছুয, মাছুষের ইচ্ছা, মানুষের প্রয়োজনসকল । অনেকে বলিবেন, ইচ্ছা জিনিসটা পরিবর্তনশীল, অনেক সময় তাহা অনিয়ন্ত্রিত, অশিক্ষিত,— তাহার হস্তে নেশনের ন্যাশনালিটির মতো প্রাচীন মহৎ সম্পদ রক্ষার ভার দিলে, ক্রমে যে সমস্ত বিশ্লিষ্ট হইয়া নষ্ট হইয়া যাইবে । মাহুষের ইচ্ছার পরিবর্তন আছে— কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু আছে, যাহার পরিবর্তন নাই ? নেশনরা অমর নহে। তাহাদের আদি ছিল, তাহাদের অস্তও ঘটবে। হয়ত এই নেশনদের পরিবর্তে কালে এক যুরোপীয় সম্প্রদায় সংঘটিত হইতেও পারে। কিন্তু এখনো তাহার লক্ষণ দেখি না । এখনকার পক্ষে এই নেশনসকলের ভিন্নতাই ভালো, তাহাই আবখ্যক । তাহারাই সকলের স্বাধীনতা রক্ষা করিতেছে— এক আইন, এক প্রভু হইলে, স্বাধীনতার পক্ষে সংকট । বৈচিত্র্য এবং অনেক সময় বিরোধী প্রবৃত্তি দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন নেশন সভ্যতাবিস্তারকার্ষে সহায়তা করিতেছে । মঙ্গুস্তত্বের মহাসংগীতে প্রত্যেকে এক-একটি স্বত্ব যোগ করিয়া দিতেছে, সবটা একত্রে মিলিয়া বাস্তবলোকে যে একটি কল্পনাগম্য মহিমার স্বষ্টি করিতেছে, তাহা কাহারও একক চেষ্টার অতীত । যাহাই হউক, রেনা বলেন,— মানুষ জাতির, ভাষার, ধর্মমতের বা নদীপৰ্বতের দাস নহে। অনেকগুলি সংযতমনা ও ভাবোত্তপ্তহৃদয় মহন্তের মহাসংঘ যে একটি সচেতন চারিত্র স্বজন করে, তাহাই নেশন। সাধারণের মঙ্গলের জন্য ব্যক্তিবিশেষের ত্যাগস্বীকারের দ্বারা এই চারিত্র-চিত্র যতক্ষণ নিজের বল সপ্রমাণ করে, ততক্ষণ তাহাকে সাচ্চ বলিয়া জানা যায় এবং ততক্ষণ তাহার টিকিয়া থাকিবার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। রেনার উক্তি শেষ করিলাম। এক্ষণে রেনার সারগর্ত বাক্যগুলি আমাদের দেশের প্রতি প্রয়োগ করিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত হওয়া যাক ।