পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\96 & রবীন্দ্র-রচনাবলী নতনেত্রের পল্লবপ্রান্তে একটুখানি জলের রেখা দেখা দিয়াছে। মাঘের অপরায় তখন সন্ধ্যার অন্ধকারে মিলাইবার উপক্রম করিতেছিল । মহেক্স মুহূর্তের মধ্যে বিনোদিনীর হাত চাপিয়া ধরিয়া রুদ্ধ সজলস্বরে কহিল, “যদি তাহাতে আমার আসে যায়, তবে তুমি থাকিবে ?” বিনোদিনী তাড়াতাড়ি হাত ছাড়াইয়া লইয়া সরিয়া বসিল । মহেন্দ্রের চমক ভাঙিয়া গেল । নিজের শেষ কথাটা ভীষণ ব্যঙ্গের মতো তাহার নিজের কানে বারংবার প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল । অপরাধী জিহৰাকে মহেন্দ্র দস্ত দ্বারা দংশন করিল— তাহার পর হইতে রসনা নির্বাক হইয়া রহিল । এমন সময় এই নৈঃশব্যপরিপূর্ণ ঘরের মধ্যে আশা প্রবেশ করিল। বিনোদিনী তৎক্ষণাৎ যেন পূর্ব-কথোপকথনের অনুবৃত্তিস্বরূপে হাসিয়া মহেন্দ্রকে বলিয়া উঠিল, “আমার ওমর তোমরা যখন এত বাড়াইলে, তখন আমারও কর্তব্য, তোমাদের একটা কথা রাখা । যতক্ষণ না বিদায় দিবে ততক্ষণ রহিলাম।” আশা স্বামীর কৃতকার্যতায় উৎফুল্প হইয়া উঠিয়া সখীকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল। কহিল, “তবে এই কথা রহিল । তাহা হইলে তিন-সত্য করে, যতক্ষণ না বিদায় দিব ততক্ষণ থাকিবে, থাকিবে, থাকিবে ।” বিনোদিনী তিনবার স্বীকার করিল। আশা কহিল, “ভাই চোখের বালি, সেই যদি রহিলেই তবে এত করিয়া সাধাইলে কেন । শেষকালে আমার স্বামীর কাছে তো হার মানিতে হইল।” 画 বিনোদিনী হাসিয়া কহিল, “ঠাকুরপো, আমি হার মানিয়াছি, না তোমাকে হার মানাইয়াছি ?” মহেন্দ্র এতক্ষণ স্তম্ভিত হইয়া ছিল ; মনে হইতেছিল, তাহার অপরাধে যেন সমস্ত ঘর ভরিয়া রহিয়াছে, লাঞ্ছনা যেন তাহার সর্বাঙ্গ পরিবেষ্টন করিয়া । আশার সঙ্গে কেমন করিয়া সে প্রসন্নমুখে স্বাভাবিকভাবে কথা কহিবে । এক মুহূর্তের মধ্যে কেমন করিয়া সে আপনার বীভৎস অসংযমকে সহাশু চটুলতায় পরিণত করিবে । এই পৈশাচিক ইন্দ্রজাল তাহার আয়ত্তের বহিভূত ছিল । সে গম্ভীরমুখে কহিল, “আমারই তো হার হইয়াছে।” বলিয়াই ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । অনতিকাল পরেই আবার মহেন্দ্র ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া বিনোদিনীকে কহিল, *আমাকে মাপ করে ।” * 漫漫 বিনোদিনী কহিল, "অপরাধ কী করিয়াছ, ঠাকুরপো ।”