পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি (సెసి এ-কথা আমাদিগকে মনে রাথিতে হইবে, এতকাল অনেক বিদেশী অধ্যাপক আমাদের কলেজের পরীক্ষাশালায় যন্ত্রতন্ত্র লইয়া অনেক নাড়াচাড়া করিয়াছেন, তাহারা কেহই স্বাধীন বুদ্ধি দেখাইয়া যশস্বী হইতে পারেন নাই। বাঙালীর মধ্যেই জগদীশ ও প্রফুল্লচন্দ্র সুযোগলাভ করিয়া সেই সুযোগের ফল দেখাইয়াছেন। পরের সহিত তর্কের জন্যই এগুলি স্মরণীয়, তাহা নহে, নিজেদের উৎসাহ ও আত্মসন্ত্রমের জন্ত । পরের কথায় নিজেদের প্রতি যেন অবিশ্বাস না জন্মে । যাহাতে আমাদের যথার্থ আত্মসন্মানবোধের উদ্রেক হয় বিদেশীরা তাহা ইচ্ছাপূর্বক করিবে না, এবং সেজন্য আমরা যেন ক্ষোভ অনুভব না করি । যেখানে যাহা স্বভাবতই আশা করা যাইতে পারে না সেখানে তাহা আশা করিতে যাওয়া মূঢ়তা— এবং সেখানে ব্যর্থমনোরথ হইয়া পুনঃপুন সেইখানেই ধাবিত হইতে যাওয়া যে কী, ভাষায় তাহার কোনো শব্দ নাই। এ স্থলে আমাদের একমাত্র কর্তব্য, নিজেরা সচেষ্ট হওয়া ; আমাদের দেশে ডাক্তার জগদীশ বস্থ প্রভৃতির মতো যে-সকল প্রতিভাসম্পন্ন মনম্বী প্রতিকূলতার মধ্যে থাকিয়াও মাথা তুলিয়াছেন, তাহাদিগকে মুক্তি দিয়া তাহাদের হস্তে দেশের ছেলেদের মানুষ করিয়া তুলিবার স্বাধীন অবকাশ দেওয়া ; অবজ্ঞা-অশ্ৰদ্ধা-অনাদরের হাত হইতে বিদ্যাকে উদ্ধার করিয়া দেবী সরস্বতীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা ; জ্ঞানশিক্ষাকে স্বদেশের জিনিস করিয়া দাড় করানো ; আমাদের শক্তির সহিত, সাধনার সহিত, প্রকৃতির সহিত তাহাকে অস্তরঙ্গরূপে সংযুক্ত করিয়া তাহাকে স্বভাবের নিয়মে পালন করিয়া তোলা ; বাহিরে আপাতত তাহার দীনবেশ, তাহার কুশতা, দেখিয়া ধৈর্ধভ্রষ্ট না হইয়া আশার সহিত আনন্দের সহিত হৃদয়ের সমস্ত প্রীতি দিয়া জীবনের সমস্ত শক্তি দিয়া তাহাকে সতেজ ও সফল করা । উপস্থিত ক্ষেত্রে ইহাই আমাদের একমাত্র আলোচ্য, একমাত্র কর্তব্য । ইহাকে যদি দুরাশা বল, তবে কি পরের রুদ্ধভারে জোড়হন্তে বসিয়া থাকাই আশা পূর্ণ হইবার একমাত্র সহজ প্রণালী । কবে কন্সার্ভেটিব গবর্মেন্ট গিয়া লিবারেল গবমেন্টের অভু্যদয় হইবে, ইহারই অপেক্ষা করিয়া শুষ্ক চঞ্চু বিস্তারপূর্বক নিদাঘমধ্যাঙ্কের আকাশে তাকাইয়া থাকাই কি হতবুদ্ধি হতভাগ্যের একমাত্র সন্ধুপায় ।