পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব (; 8 S শুনিলাম যে, তাহাদের দেশে নিছেপুছে' শব্দের চলন আছে। এবং নববধূ ঘরে আসিলে তাহার মুখে গায়ে হাত বুলাইয়া তাহাকে ‘নিছিয়া' লওয়া হয়। অতএব এরূপ চলিত প্রয়োগ থাকিলে নিছনি শব্দের অর্থ সম্বন্ধে সংশয় থাকে না । 〉 &S)。 প্রত্যুত্তর পহু প্রসঙ্গ S শ্ৰীযুক্ত বাবু ক্ষীরোদচন্দ্র রায়চৌধুরী’ মান্তবরেষু আপনি বলিয়াছেন : অপভ্রংশের নিয়ম সকলজাতির মধ্যে সমান নহে, কারণ কণ্ঠের ব্যাবৃত্তি সকলের সমান নহে । দুঃখের বিষয় বাংলার শব্দশাস্ত্র এখনও রচিত হয় নাই । এ কথা নিঃসন্দেহ সত্য । এবং এইজন্যই বাংলার কোন শব্দটা শব্দশাস্ত্রের কোন নিয়মানুসারে বিকার প্রাপ্ত হইয়াছে তাহা নির্ণয় করা কঠিন । আপনার মতে : শব্দশাস্ত্রের কোনো স্বত্র অনুসারে প্রভু হইতে পহু শব্দের বুৎপত্তি করা যায় না। কিন্তু যে-হেতুক বাংলার শব্দশাস্ত্র এখনও রচিত হয় নাই, ইহার স্বত্র নির্ধারণ করার কোনো উপায় নাই। অতএব বাংলার আরও দুইচারিটা শব্দের সহিত তুলনা করা ছাড়া অন্য পথ দেখিতেছি না । বোধ করি আপনার তর্কটা এই যে, মূল শব্দে যেখানে অমুনাসিকের কোনো সংস্রব নাই, সেখানে অপভ্রংশে অনুনাসিকের প্রয়োগ শব্দশাস্ত্রের নিয়মবিরুদ্ধ। বন্ধু’ হইতে পন্থ শব্দের উৎপত্তি স্থির করিলে এই সংকট হইতে উদ্ধার পাওয়া যায়। কিন্তু শব্দতত্ত্বে সর্বত্র এ নিয়ম খাটে না, তাহার দৃষ্টান্ত দেখাই ; যথা, কক্ষ হইতে কাকাল, বক্র হইতে বাকা, অক্ষি হইতে আঁথি, শস্য হইতে শাস, সত্য হইতে সাচ্চা । যদি বলেন, পরবর্তী যুক্ত-অক্ষরের পূর্বে চন্দ্রবিন্দু যোগ হইতে পারে কিন্তু অযুক্ত অক্ষরের পূর্বে হয় না, সে কথাও ঠিক নহে। শাবক হইতে ছা, প্রাচীর হইতে পাচিল তাহার দৃষ্টাস্তস্থল। সাধারণত অপ্রচলিত এবং বৈষ্ণব পদাবলীতেই ১ প্রশ্নকর্তা । ‘পহু’– সাধনা, ১২৯৯ শ্রাবণ ।