পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ SᏬᎸ “কী কথা বল তুমি। চলে যেতে হয়েছিল কিন্তু যতক্ষণ না ফিরেছি মনে স্বস্তি ছিল না।” “কেমন করে বসেছ তুমি । তোমার পাছটাে বিছানায় তোলো।” “বেড়ি দিতে চাও পাছে পালাই !” “হঁ। বেড়ি দিতে চাই। জনমে মরণে তোমার পা দুখানি নিঃসন্দেহে রইল আমার কাছে বাধা ।” “মাঝে মাঝে একটু একটু সন্দেহ কোরে, তাতে অাদরের স্বাদ বাড়ায়।” “না, একটুও সন্দেহ না। এতটুকুও না । তোমার মতো এমন স্বামী কোন মেয়ে পেয়েছে। তোমাকেও সন্দেহ, তাতে যে আমাকেই ধিকার ” “আমিই তা হলে তোমাকে সন্দেহ করব, নইলে জমবে না নাটক ।” "তা কোরো, কোনো ভয় নেই। সেটা হবে প্রহসন।” “যাই বল আজ কিন্তু রাগ করেছিলে আমার পরে।” *কেন আবার সে কথা । শাস্তি তোমার দিতে হবে না— নিজের মধ্যেই তার দণ্ডবিধান ।” “দণ্ড কিসের জন্য। রাগের তাপ যদি মাঝে মাঝে দেখা না দেয় তা হলে বুঝব ভালাবাসার নাড়ি ছেড়ে গেছে।” -- “যদি কোনো দিন ভুলে তোমার উপরে রাগ করি, নিশ্চয় জেনে। সে আমি নয়, কোনো অপদেবতা আমার উপরে ভর করেছে।” “অপদেবতা আমাদের সকলেরই একটা করে থাকে, মাঝে মাঝে অকারণে জানান দেয়। স্ববুদ্ধি যদি আসে, রাম নাম করি, দেয় সে দৌড় ।” | আয় ঘরে এল। বললে, “জামাইবাৰু, আজ সকাল থেকে খোখী দুধ খায় नि, ওষুধ খায় নি, মালিশ করে নি। এমন করলে আমরা ওর সঙ্গে পারব না।” বলেই হন হন করে হাত তুলিয়ে চলে গেল । শুনেই অাদিত্য দাড়িয়ে উঠল, বললে, “এবার তবে আমি রাগ করি ?” “ই করে, খুব রাগ করো, যত পার রাগ করে, অন্যায় করেছি, কিন্তু মাপ কোরে। তার পরে ” আদিত্য দরজার কাছে এসে ডাক দিতে লাগল, “সরলা, সরল।” শুনেই নীরজার শিরায় শিরায় যেন ঝন ঝন করে উঠল। বুঝলে বেঁধানে৷ কাটায় হাত পড়েছে। সরল এল ঘরে। আদিত্য বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলে, “নীরুকে ওষুধ দাও নি আজ, সারাদিন কিছু খেতেও দেওয়া হয় নি ?” নীরজা বলে উঠল, “ওকে বকছ কেন । ওর দোষ কী। আমিই দুষ্ট মি করে খাই নি, আমাকে বকে না । সরলা তুমি যাও ; মিছে কেন দাড়িয়ে বকুনি খাবে।”