পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8(이 প্রাচ্য সমাজ কোনো ইংরেজ মহিলা মুসলমান স্ত্রীলোকদের দুরবস্থা বর্ণনা করিয়া নাইনটিন্থসেঞ্চুরিতে যে প্রবন্ধ লিখিয়াছেন, আমরা পূর্ব সংখ্যায় তাহার সারমর্ম প্রকাশ করিয়াছি। গত সেপ্টেম্বরের পত্রিকায় অনারেবল জষ্টিস আমির আলি তাহার জবাব দিয়াছেন । তিনি দেখাইতেছেন যে, খৃষ্টীয় ধর্মই যে যুরোপে স্ত্রীলোকদের অবস্থার উন্নতি সাধন করিয়াছে তাহা নহে, ক্রমে ক্রমে জ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশেই তাহারা বর্তমান উচ্চপদবী প্রাপ্ত হইয়াছে । খৃষ্টীয় সমাজের প্রথম অবস্থায় স্ত্রীজাতি খৃষ্টধর্মমণ্ডলীর চক্ষে নিতান্ত নিন্দিতভাবে ছিলেন। স্ত্রীলোকদের স্বাভাবিক দূষণীয়তা সম্বন্ধে চার্চের অধ্যক্ষগণ বিপরীত বিদ্বেষের সহিত মত প্রকাশ করিয়াছেন ; খৃষ্টীয় সাধু টর্টলিয়ন স্ত্রীলোককে শয়তানের প্রবেশদ্বার, নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফলচৌর, দিব্যধর্ম-পরিত্যাগিনী, মনুষ্যরূপী-ঈশ্বরপ্রতিমাবিনাশিনী আখ্যা দিয়াছেন । এবং সেণ্ট ক্রিসস্টম স্ত্রীলোককে প্রয়োজনীয় পাপ, প্রকৃতির মায়াপাশ, মনোহর বিপৎপাত, গার্হস্থ্য সংকট সাংঘাতিক অাকর্ষণ এবং সুচিক্কণ অকল্যাণ শব্দে অভিহিত করিয়াছেন । তখন কোনো উচ্চ অঙ্গের ধর্মানুষ্ঠানে স্ত্রীলোকদের অধিকার ছিল না। জনসমাজে মিশিতে, প্রকাশ্বে বাহির হইতে, কোনো ভোজে বা উৎসবে গমন করিতে তাহাদের কঠিন নিষেধ ছিল। অন্তরালে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া মৌনাবলম্বনপূর্বক স্বামীর আজ্ঞা পালন করা এবং তাত চরকা ও রন্ধন লইয়া থাকাই তাহাদের কর্তব্য বলিয়। নির্দিষ্ট ছিল। তারপর মধ্যযুগে যখন চিভলরি-ধর্মের অভু্যদয়ে যুরোপে নারীভক্তির প্রচার হইল, স্ত্রীলোকদের প্রতি উৎপীড়ন এবং প্রতারণা তখনকার কালেরও একটি প্রধান লক্ষণ ছিল । বহুবিবাহ এবং গোপন বিবাহ কেবল কুলীন নহে সাধারণের মধ্যেই প্রচলিত ছিল । ধর্মযাজকেরাও তাহাদের চির কৌমাৰ্যব্রত লঙ্ঘন করিয়া একাধিক বৈধ অথবা অবৈধ বিবাহ করিত । পুরাবৃত্তবিৎ হ্যালাম দেখাইয়াছেন যে, জর্মান ধর্মসংস্কারকগণ সন্তানাভাবে এককালীন দুই অথবা তিন বিবাহ বৈধ বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন। সকলেই জানেন মহারাজ শার্ল মানের বহুপত্নী ছিল । খৃষ্টধর্ম ১ মুসলমান মহিলা : সাধনা, ১২৯৮ অগ্রহায়ণ দ্রষ্টব্য ; রচনাবলী, ১২শ থও, পূর্ববর্তী প্রবন্ধ