পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@>心 রবীন্দ্র-রচনাবলী এই দুঃসাধ্যত, দুর্লভত, জটিলতা যুরোপীয় সভ্যতার সর্বপ্রধান দুর্বলতা। সাতার দিতে গিয়া অত্যন্ত বেশি হাত-পা ছোড়। অপটুতারই প্রমাণ দেয় ; কোনো সভ্যতার মধ্যে ৰখন সর্ব বিষয়েই প্রয়াসের একান্ত আতিশষ্য দেখা যায়, তখন ইহা বুঝিতে হইবে তাহার যতটা শক্তি বাহিরে দেখা যাইতেছে, তাহার অনেকটারই প্রতিমুহূর্তে অপব্যয় হইতেছে । বিপুল মালমসলা-কাঠখড়ের হিসাব যদি ঠিকমতে রাখা যায়, তবে দেখা যাইবে, মজুরি পোষাইতেছে না। প্রকৃতির খাতায় স্বদে-আসলে হিসাব বাড়িতেছে, মাঝে মাঝে তাগিদের পেয়াদাও যে আসিতেছে না তাহাও নহে— কিন্তু, সে লইয়া আমাদের চিস্তা করিবার দরকার নাই । আমাদের ভাবনার বিষয় এই যে, দেশে ৰিচার দুমূল্য, অন্ন দুমূল্য, শিক্ষাও যদি তুমুল্য হয় তবে ধনী-দরিত্রের মধ্যে নিদারুণ বিচ্ছেদ আমাদের দেশেও অত্যন্ত বৃহৎ হইয়া উঠিবে। বিলাতে দারিদ্র্য কেবল ধনের অভাব নহে, তাহা মনুষ্যত্বেরও অভাব —কারণ, সেখানে মন্থন্তত্বের সমস্ত উপকরণই চড়া দরে বিক্রয় হয় । আমাদের দেশে দরিদ্রের মধ্যে মকুন্যত্ব ছিল, কারণ আমাদের সমাজে স্থখ-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-আমোদ মোটের উপরে সকলে ভাগাভাগি করিয়া লইয়াছে। ধনীর চণ্ডীমণ্ডপে যে-পাঠশালা বসিয়াছে গরিবের ছেলেরা বিনা বেতনে তাহাতে শিক্ষা পাইয়াছে— রাজার সভায় যেউৎসব হইয়াছে দরিদ্র প্রজা বিনা আহৰানে তাহাতে প্রবেশলাভ করিয়াছে। ধনীর বাগানে দরিদ্র প্রত্যহ পূজার ফুল তুলিয়াছে, কেহ তাহাকে পুলিসে দেয় নাই ; সম্পন্ন ব্যক্তি দিঘি-ঝিল কাটাইয় তাহার চারি দিকে পাহারা বসাইয়া রাখে নাই । ইহাতে দরিদ্রের আত্মসন্ত্রম ছিল— ধনীর ঐশ্বর্ষে তাহার স্বাভাবিক দাবি ছিল, এই জন্ত, তাহার অবস্থা যেমনই হউক, সে পাশবতা প্রাপ্ত হয় নাই— যাহারা জাতিভেদ ও মনুষ্যত্বের উচ্চ অধিকার লইয়া মুখস্থ বুলি আওড়ান, তাহারা এ-সব কথা ভালো করিয়া চিম্ভা করিয়া দেখেন না । বিলাতি লাট আজকাল বলিতেছেন, যাহার টাকা নাই, ক্ষমতা নাই, তাহার বিদ্যাশিক্ষার প্রতি অত্যস্ত লোভ করিবার দরকার কী । আমাদের কানে এ-কথাটা অত্যন্ত বিদেশী, অত্যন্ত নিষ্ঠুর বলিয়া ঠেকে । কিন্তু সমস্ত সহিতে হইবে । তাই বলিয়া বসিয়া বসিয়া আক্ষেপ করিলে চলিবে না। আমরা নিজেরা স্বাহা করিতে পারি তাহারই জন্ত আমাদিগকে কোমর বাধিতে হুইবে । বিদ্যাশিক্ষার ব্যবস্থা আমাদের দেশে সমাজের ব্যবস্থা ছিল— রাজার উপরে বাহিরের সাহায্যের উপরে ইহার নির্ভর ছিল না— সমাজ ইহাকে রক্ষণ করিয়াছে এবং সমাজকে ইহা রক্ষা করিয়াছে । এখন বিদ্যাশিক্ষা রাজার কাজ পাইবার সহায়স্বরূপ হইয়াছে, তখন ৰিষ্ঠাশিক্ষা