পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 86 & অসংকোচে স্নাত দেহে পঙ্ক নিক্ষেপ করতে পারে ; মনে জানে, এরূপ স্থলে সহিষ্ণুতাই ভদ্রতার একমাত্র কৌলিক ধর্ম। মহারাষ্ট্রীয় শ্রোতৃবালকবর্গের প্রতি এতটা কথা বলা অসংগত হয়ে পড়ে— আমি কেবল প্রসঙ্গক্রমে এই কথাটা বলে রাখলুম। আক্ষেপের বিষয় এই, যাদের প্রতি এ কথা থাটে তারা এ ভাষা বোঝে না এবং তাদের যে-ভাষা তা ভদ্রসম্প্রদায়ের শ্রবণের ও ব্যবহারের অযোগ্য । জ্যৈষ্ঠ ১২৯৬ পুণা মুসলমান মহিল৷ সারসংগ্ৰহ • কোনো তুরস্কবাসিনী ইংরেজরমণী মুসলমান নারীদিগের একান্ত দুরবস্থার যে বর্ণনা করিয়াছেন তাহা বিশেষ প্রমাণ না পাইলে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা উচিত জ্ঞান করি না । কিন্তু অসুর্যম্পশু জেনানার সুখদুঃখ সত্যমিথ্যা কে প্রমাণ করিবে । তবে, আমাদের নিজের অন্তঃপুরের সহিত তুলনা করিয়া কতকটা বুঝা যায়। লেখিকা গল্প করিতেছেন, তিনি দুইটি মুসলমান অন্তঃপুরচারিণীর সহিত গল্প করিতেছেন এমন সময়ে হঠাৎ দেখিলেন, তাহাদের মধ্যে একজন তক্তার নীচে আরএকজন সিন্দুকের তলায় তাড়াতাড়ি প্রবেশ করিয়া লুকাইয়া পড়িল । ব্যাপারটা আর-কিছুই নয়, তাহাদের দেবর দ্বারের নিকট উপস্থিত হইয়াছিল। আমাদের দেশে ভ্রাতৃবধূর দৃষ্টিপথে ভাস্করের অভু্যদয় হইলে কতকটা এইমতোই বিপর্যয় ব্যাপার উপস্থিত হয়। নব্য মুসলমানেরা এইরূপ সতর্ক অবরোধ সম্বন্ধে বলিয়া থাকেন, “বহুমূল্য জহরৎ কি কেহ রাস্তার ধারে ফেলিয়া রাখে । তাহাকে এমন সাবধানে ঢাকিয়া রাখা আবশ্বক যে, সূর্যালোকেও তাহার জ্যোতিকে স্নান না করিতে পারে।” আমাদের দেশেও যাহারা বাক্যবিদ্যাসবিশারদ তাহারা এইরূপ বড়ো বড়ো কথা বলিয়া থাকেন। র্তাহারা শাস্ত্রের শ্লোক ও কবিত্বের ছটার দ্বারা প্রমাণ করেন যে, যাহাকে তোমরা মহন্তত্বের প্রতি অত্যাচার বল তাহা প্রকৃতপক্ষে দেবত্বের প্রতি সম্মান। কিন্তু কথায় চি ড়ে ভিজে না। যে-হতভাগিনী মনুষ্যস্থলভ ক্ষুধা লইয়া বসিয়া আছে, তাহাকে কেবলই শাস্ত্রীয় স্তুতি দিয়া মাঝে মাঝে পার্থিব দধি না দিলে তাহার বরাদ একমুষ্টি শুষ্ক চিড় গলা দিয়া নাবা নিতান্ত দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে ।