পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S는 রবীন্দ্র-রচনাবলী কাদম্বিনীর সঙ্গে সম্বন্ধ করি, তখন বলিস ইন্দুমতীকে বিয়ে করবি— তুই তোর বুড়ো বাপকে একবার বাগবাজার একবার মির্জাপুর খেপিয়ে নিয়ে নাচিয়ে নিয়ে বেড়াতে চাস । নিমাই। আমাকে মাপ করুন বাবা, আমার একটা মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছিল— শিবচরণ। ভুল কী রে বেটা ! তোকে সেই বাগবাজারে বিয়ে করতেই হবে । তাদের কোনো পুরুষে চিনিনে, আমি নিজে গিয়ে তাদের স্তুতিমিনতি করে এলুম, যেন আমারই কন্তেদায় হয়েছে— তার পরে যখন সমস্ত ঠিকঠাক হয়ে গেল, আজ তারা আশীৰ্বাদ করতে আসবে তখন বলে কি না আমি বিয়ে করব না। আমি এখন চৌধুরীদের বলি কী । r চন্দ্রকাস্তের প্রবেশ চন্দ্রকান্ত । ( নিমাইয়ের প্রতি ) সমস্ত শুনলুম। ভালো একটি গোল বাধিয়েছ যা হোক – এই যে ডাক্তারবাবু, ভালো আছেন তো ? শিবচরণ। ভালো আর থাকতে দিলে কই । এই দেখো না চন্দর, ওঁর নিজেরই কথামতো একটি পাত্রী স্থির করলুম– যখন সমস্ত স্থির হয়ে গেল তখন বলে কি না, তাকে বিয়ে করব না। আমি এখন চৌধুরীদের বলি কী। নিমাই । বাবা, আপনি তাদের একটু বুঝিয়ে বললেই— শিবচরণ। তোমার মাথা ! তাদের বোঝাতে হবে আমার ভীমরতি ধরেছে আর আমার ছেলেটি একটি আস্ত খেপা— তা তাদের বুঝতে বিলম্ব হবে না । চন্দ্রকান্ত । আপনি কিছু ভাববেন না । সে মেয়েটির আর-একটি পাত্র জুটিয়ে দিলেই হবে । শিবচরণ। সে তেমন মেয়েই নয় । তার টাকা আছে ঢের কিন্তু চেহারা দেখে পাত্র এগোয় না। আমার বংশের এই অকালকুষ্মাণ্ডের মতো হঠাৎ এতবড়ো হতভাগা তুমি দ্বিতীয় আর কোথায় পাবে যে তাকে বিয়ে করতে রাজি হবে । চন্দ্রকান্ত । সে আমার উপর ভার রইল। আমি সমস্ত ঠিকঠাক করে দেব । এখন নিশ্চিন্ত মনে নিবারণবাবুর মেয়ের সঙ্গে বিবাহ স্থির করুন । শিবচরণ। যদি পার চন্দর তো বড়ো উপকার হয়। এই বাগবাজারের হাত থেকে মানে মানে নিস্তার পেলে বাচি । এদিকে আমি নিবারণের কাছে মুখ দেখাতে পারছিনে, পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি । চন্দ্রকান্ত । সে জন্তে কোনো ভাবনা নেই । আমি প্রায় অর্ধেক কাজ গুছিয়ে এসে তবে আপনাকে বলছি। এখন বাকিটুকু সেরে আসি । [ প্রস্থান