পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 86 & তাহার সম্মুখে আসে না— দৈবাৎ তাহাদের উভয়ের সাক্ষাৎ হইলে সে তখনই চলিয়া যায়। আজ এত রাত্রে এমন সহজে সে যে তাহার ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল, এ বড়ো বিস্ময়কর। মহেন্দ্র তাহার বই হইতে মুখ না তুলিয়াই বুঝিল, আশার আজ চলিয়া যাইবার লক্ষণ নহে। আশা মহেঞ্জের সম্মুখে স্থিরভাবে আসিয়া দাড়াইল । তখন মহেন্দ্র আর পড়িবার ভান করিতে পারিল না— মুখ তুলিয়া চাহিল। আশা স্বম্পষ্ট স্বরে কহিল, “মার হাপানি বাড়িয়াছে, তুমি একবার তাহাকে দেখিলে ভালো হয়।” মহেন্দ্র । তিনি কোথায় আছেন ? আশা । তাহার শোবার ঘরেই আছেন, ঘুমাইতে পারিতেছেন না। মহেন্দ্র । তবে চলো তাহাকে দেখিয়া আসিগে । অনেক দিনের পরে আশার সঙ্গে এইটুকু কথা কহিয়া মহেন্দ্ৰ যেন অনেকটা হালকা বোধ করিল। নীরবতা যেন দুর্ভেদ্য দুর্গপ্রাচীরের মতো স্ত্রীপুরুষের মাঝখানে কালো ছায়া ফেলিয়া দাড়াইয়া ছিল, মহেন্দ্রের তরফ হইতে তাহা ভাঙিবার কোনো অস্ত্র ছিল না— এমন সময় আশা স্বহস্তে কেল্লার একটি ছোটো দ্বার খুলিয়া দিল । r রাজলক্ষ্মীর দ্বারের বাহিরে অাশা দাড়াইয়া রহিল, মহেন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিল। মহেন্দ্রকে অসময়ে ঘরে আসিতে দেখিয়া রাজলক্ষ্মী ভীত হইলেন, ভাবিলেন, বুঝি বা আশার সঙ্গে রাগারগি করিয়া আবার সে বিদায় লইতে আসিয়াছে। কহিলেন, “মহিন, এখনো ঘুমাস নাই ?” মহেন্দ্ৰ কহিল, “মা, তোমার সেই হাপানি কি বাড়িয়াছে।” এতদিন পরে এই প্রশ্ন শুনিয়া মার মনে বড়ো অভিমান জন্মিল। বুঝিলেন, বউ গিয়া বলাতেই আজ মহিন মার খবর লইতে আসিয়াছে। এই অভিমানের আবেগে র্তাহার বক্ষ আরো আন্দোলিত হইয়া উঠিল— কষ্টে বাক্য উচ্চারণ করিয়া বলিলেন, “যা, তুই শুতে যা । আমার ও কিছুই না।” মহেন্দ্র । না মা, একবার পরীক্ষা করিয়া দেখা ভালো, এ ব্যামো উপেক্ষা করিবার জিনিস নহে । মহেন্দ্র জানিত, তাহার মাতার হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতা আছে, এই কারণে এবং মাতার মুখত্রর লক্ষণ দেখিয়া সে উদবেগ অঙ্কুভব করিল। মা কহিলেন, “পরীক্ষা করিবার দরকার নাই, আমার এ ব্যামো সারিবার নহে ।” মছেজ কহিল, "আচ্ছা, আজ রাত্রের মতো একটা ঘুমের ওষুধ আনাইয়া জিতেছি, কাল ভালো করিয়া দেখা যাইবে।”