পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

શ88 রবীন্দ্র-রচনাবলী নিমাই নিমাই । আহা, এই বাড়িটা আমার শরীর থেকে আমার মনটুকুকে যেন শুষে নিচ্ছে — ব্লটিং যেমন কাগজ থেকে কালি শুষে নেয়। কিন্তু কোনদিকে সে থাকে এ পর্যন্ত কিছুই সন্ধান করতে পারলুম না । ঐ যে পশ্চিমের জানালার ভিতর দিয়ে একটা সাদা কাপড়ের মতো যেন দেখা গেল— না না, ও তো নয়, ও তো এক জন দাসী দেখছি— ও কী করছে । একটা ভিজে শাড়ি শুকোতে দিচ্ছে । বোধ হয় উারই শাড়ি । আহা, নাগাল পেলে একবার স্পর্শ করে নিতুম। তা হলে এতক্ষণে র্তার স্নান হল । পিঠের উপরে ভিজে চুল ফেলে সাফ কাপড়টি পরে এখন কী করছেন। একবার কিছুতেই কি দেখা হতে পারে না । আমরা কি বনের জন্তু । আমাদের কেন এত ভয় । এত করে এতগুলো দেয়াল গেথে এতগুলো দরজা-জানলা বন্ধ করে মানুষের কাছ থেকে মাচুষ লুকিয়ে থাকে কেন । পালকিতে শিবচরণের প্রবেশ শিবচরণ । ( বেহারার প্রতি ) অারে রাখ, রাখ, । [ পালকি হইতে অবতরণ বেটার তবু ছশ নেই! দেখো না, ই করে দাড়িয়ে আছে দেখো না ! যেন থিদে পেয়েছে, এই বাড়ির ইটকাঠগুলো গিলে খাবে । ছোড়ার হল কী ? খাচার পাখির দিকে বেড়াল যেমন তাকিয়ে থাকে তেমনি করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে । রোসে, এবারে ওকে জবা করছি— বাবাজি হাতে হাতে ধরা পড়েছেন । হতভাগ কলেজে যাবার নাম করে রোজ বাগবাজারে এসে ঘুর ঘুর করে। ( নিকটে জাসিয়া ) বাপু, মেডিকেল কলেজটা কোনদিকে একবার দেখিয়ে দাও দেখি । নিমাই। কী সর্বনাশ ! এ যে বাবা । শিবচরণ। শুনছ ? কালেজ কোনদিকে ! তোমার অ্যানাটমির নোট কি ওই দেয়ালের গায়ে লেখা আছে । তোমার সমস্ত ডাক্তারি শাস্ত্র কি ওই জানলায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে । ( নিমাই নিরুত্তর ) মুখে কথা নেই যে ! লক্ষ্মীছাড়া, এই তোর একজামিন ! এইখানে তোর মেডিকেল কালেজ !