পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী اب ولايت (ع\ বিনোদিনী মধুভাও লইয়া স্বয়ং রাজলক্ষ্মীর কাছে গিয়া কহিল, "পিলিমা, বিহারীঠাকুরপো মধু পাঠাইয়াছেন।” রাজলক্ষ্মী তাহা ভাড়ারে তুলিয়া রাখিতে উপদেশ দিলেন। বিনোদিনী মধু তুলিয়া আসিয়া রাজলক্ষ্মীর কাছে বসিল । কহিল, “বিহারী-ঠাকুরপো কখনো তোমাদের তত্ত্ব লইতে ভোলেন না। বেচারার নিজের মা নাই নাকি, তাই তোমাকেই মার মতো দেখেন ।” বিহারীকে রাজলক্ষ্মী এমনি মহেন্দ্রের ছায়া বলিয়া জানিতেন যে, তাহার কথা তিনি বিশেষ-কিছু ভাবিতেন না— সে তাহাদের বিনা-মূল্যের বিনা যত্বের বিনা-চিস্তার অতুগত লোক ছিল। বিনোদিনী যখন রাজলক্ষ্মীকে মাতৃহীন বিহারীর মাতৃস্থানীয়া বলিয়া উল্লেখ করিল, তখন রাজলক্ষ্মীর মাতৃহৃদয় অকস্মাৎ স্পর্শ করিল। হঠাৎ মনে হইল, “ত বটে, বিহারীর মা নাই এবং আমাকেই সে মার মতো দেখে ।” মনে পড়িল, রোগে তাপে সংকটে বিহারী বরাবর বিনা-আহবানে, বিনা-আড়ম্বরে তাহাকে নিঃশব্দ নিষ্ঠার সহিত সেবা করিয়াছে ; রাজলক্ষ্মী তাহ নিশ্বাসপ্রশ্বাসের মতো সহজে গ্রহণ করিয়াছেন এবং সেজন্য কাহারও কাছে কৃতজ্ঞ হওয়ার কথা তাহার মনেও উদয় হয় নাই। কিন্তু বিহারীর খোঁজখবর কে রাখিয়াছে। যখন অন্নপূর্ণ ছিলেন তিনি রাখিতেন বটে— রাজলক্ষ্মী ভাবিতেন, “বিহারীকে বশে রাখিবার জন্য অন্নপূর্ণ স্নেহের আড়ম্বর করিতেছেন।” রাজলক্ষ্মী আজ নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “বিহারী আমার আপন ছেলের মতোই বটে।” বলিয়াই মনে উদয় হইল, বিহারী তাহার আপন ছেলের চেয়ে ঢের বেশি করে— এবং কখনো বিশেষ কিছু প্রতিদান না পাইয়াও র্তাহীদের প্রতি সে ভক্তি স্থির রাখিয়াছে। ইহা ভাবিয়া তাহার অস্তরের মধ্য হইতে দীর্ঘনিশ্বাস পড়িল । বিনোদিনী কহিল, “বিহারী-ঠাকুরপো তোমার হাতের রান্না খাইতে বড়ো ভালোবাসেন ।” রাজলক্ষ্মী সমেহগর্বে কহিলেন, “আর-কারো মাছের ঝোল তাহার মুখে রোচে না ।” * * বলিতে বলিতে মনে পড়িল, অনেক দিন বিহারী আসে নাই। কহিলেন, *আচ্ছা বউ, বিহারীকে আজকাল দেখিতে পাই না কেন ।” বিনোদিনী কহিল, “আমিও তো তাই ভাবিতেছিলাম, পিসিমা । তা, তোমার