পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩২ রবীন্দ্র-রচনাবলী বুঝাইয়া বলিতে হইবে না। খাম তাহার কম্ভার বিবাহোপলক্ষে পাচ শ টাকা খরচ করিয়াছে ; লোকে যদি রটায় যে সে পাচ হাজার টাকা খরচ করিয়াছে, তবে সেই জনরবকেই কি হুজুক বলিবে । পঞ্চম সংজ্ঞা । মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে অসম্ভব সংবাদ রাষ্ট্র হইয়া থাকে, তাহাকে কেহ হুজুক বলে না । যষ্ঠ সংজ্ঞা । লাভ অনিশ্চিত এমনতরো ব্যবসায়ে অনেকে অর্থলোভে প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন, সেরূপ ব্যবসায়কে কেহ হুজুক বলে না। সপ্তম । এ সংজ্ঞাটি পরিষ্কার নহে। যে-ঘটনার স্রোতে লোকে ভাসিতে থাকে তাহাকে হুজুক বলা যায় না ; তবে লেখক হ্যাপী শব্দের যোগ করিয়া ইহার মধ্যে আর-একটি নূতন ভাব প্রবেশ করাইয়াছেন। কিন্তু হ্যাপী শব্দের ঠিক অর্থটি কী সে সম্বন্ধে তর্ক উঠিতে পারে, অতএব হুজুগ শব্দের ন্তায় হ্যাপা শব্দও সংজ্ঞানির্দেশযোগ্য । স্বতরাং হ্যাপী শব্দের সাহায্যে হুজুগ শব্দ বোঝাইবার চেষ্টা সংগত হয় না। বাজারদরে নেচে বেড়ানো’, ‘ঝড়ের আগে ধুলাউড়া’– দুটি ব্যাখ্যাও সুস্পষ্ট নহে। s অষ্টম। হরি যদি মাধবকে বলে, তুই ট্যাকশালের দাওয়ান হইবি,– অমনি যদি মাধব নাচিয় উঠে— তবে মাধবের সেই উৎসাহ-উল্লাসকে হুজুগ বলা যায় না। নবম। আন্দোলন নূতন হইলেই তাহাকে হুজুগ বলা যাইতে পারে না। দশম । বাহাড়ম্বরে মত্তত মাত্রই হুজুগ বলিতে পারি না । কোনো রায়বাহাদুর যদি তাহার খেতাব ও গাড়িজুড়ি লইয়া মাতিয়া থাকে, তাহার সেই মত্ততাকে কি হুজুগ বলা যায়। , আমরা যে-লেখককে পুরস্কার দিয়াছি তিনি হুজুগ শব্দের নিম্নলিখিতমতো ব্যাখ্যা করেন : মাথা নাই মাথা ব্যথা গোছের কতকগুলো নাচুনে জিনিস লইয়৷ যে-নাচন আরম্ভ হয় সেই নাচনের অবস্থাকেই হুজুগ বলে । বিশেষ কিছুই হয় নাই অথবা অতি সামান্ত একটা-কিছু হইয়াছে আর সেইটাকে লইয়া সকলে নাচিয়া উঠিয়াছে, এই অবস্থার নাম হুজুগ । & আমরা দেখিতেছি হুজুগে প্রথমত এমন একটা বিষয় থাকা চাই যাহার প্রতিষ্ঠাভূমি নাই— যাহার ডালপালা খুব বিস্তৃত, কিন্তু শিকড়ের দিকের অভাব। মনে করে। আমি ‘সার্বজনীনতা’ বা ‘বিশ্বপ্রেম’ প্রচারের জন্য এক সম্প্রদায় স্বষ্টি করিয়া বসিয়াছি ; তাহার কত মন্ত্রতন্ত্র কত অনুষ্ঠান তাহার ঠিক নাই, কিন্তু আমার ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের বহিভূত লোকদের প্রতি আমাদের জাত-বিদ্বেষ প্রকাশ পাইতেছে— মূলেই প্রেমের অভাব অথচ প্রেমের অনুষ্ঠানের ক্রটি নাই। দ্বিতীয়ত,