পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీకఱ - রবীন্দ্র-রচনাবলী আসিয়া, জাহারের আয়োজন করিবে কি না, জিজ্ঞাসা করিল,— বিহারী কহিল, “এখন থাক্ ।” মিস্ত্রির সর্দার আসিয়া বিশেষ পরামর্শের জন্য তাহাকে কাজ দেখিতে আহবান করিল— বিহারী কহিল, “আর-একটু পরে।” এমন সময় বিহারী হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া দেখিল, সম্মুখে অন্নপূর্ণ। শশব্যস্ত হইয়া উঠিয়া পড়িল— দুই হাতে র্তাহার পা চাপিয়া ধরিয়া ভূতলে মাথা রাখিয়া প্ৰণাম করিল। অন্নপূর্ণ র্তাহার দক্ষিণ হস্ত দিয়া পরমস্নেহে বিহারীর মাথা ও গা স্পর্শ করিলেন। অশ্রুজড়িতম্বরে কহিলেন, “বিহারী, তুই এত রোগ হইয়া গেছিস কেন।” বিহারী কহিল, "কাকীমা, তোমার স্নেহ ফিরিয়া পাইবার জন্য ।” শুনিয়া অন্নপূর্ণার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। বিহারী ব্যস্ত হইয়া কহিল, ”কাকীমা, তোমার এখনো খাওয়া হয় নাই ?” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “না, এখনো আমার সময় হয় নাই ।” বিহারী কহিল, "চলো, আমি রাধিবার জোগাড় করিয়া দিইগে । আজ অনেক দিন পরে তোমার হাতের রান্না এবং তোমার পাতের প্রসাদ খাইয়া বাচিব।” মহেন্দ্র-আশার সম্বন্ধে বিহারী কোনো কথাই উত্থাপন করিল না। অন্নপূর্ণ একদিন স্বহস্তে বিহারীর নিকটে সেদিককার দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিয়াছেন । অভিমানের সহিত সেই নিষ্ঠুর নিষেধ সে পালন করিল। আহারান্তে অন্নপূর্ণ কহিলেন, “নৌকা ঘাটেই প্রস্তুত আছে, বিহারী, এখন একবার কলিকাতায় চল।” বিহারী কহিল, "কলিকাতায় আমার কোন প্রয়োজন ।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “দিদির বড়ো অসুখ, তিনি তোকে দেখিতে চাহিয়াছেন।” শুনিয়া বিহারী চকিত হইয়া উঠিল । জিজ্ঞাসা করিল, “মহিনদা কোথায় ।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “সে কলিকাতায় নাই, পশ্চিমে চলিয়া গেছে।” শুনিয়া মুহূর্তে বিহারীর মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। সে চুপ করিয়া রহিল। অন্নপূর্ণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুই কি সকল কথা জানিসনে ৷” ৰিহারী কহিল, “কতকটা জানি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানি না।” তখন অন্নপূর্ণ, বিনোদিনীকে লইয়া মহেঞ্জের পশ্চিমে পলায়ন-বার্তা বলিলেন । বিহারীর চক্ষে তৎক্ষণাৎ জলস্থল-আকাশের সমস্ত রং বদলাইয়া গেল, তাহার কল্পনা ভাণ্ডারের সমস্ত সঞ্চিত রস মুহূর্তে তিক্ত হইয়া উঠিল – “মায়াবিনী বিনোদিনী কি সেদিনকার সন্ধ্যাবেলায় আমাকে লইয়া খেলা করিয়া গেল। তাহার ভালো