পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ ৪২৩ সন্তান উৎপাদনের জন্ত স্ত্রীগণ বহুকল্যাণভাগিনী পূজনীয়া ও গৃহের শোভাজনক হরেন। উৎপাদনমপত্যস্ত জগতস্ত পরিপালনং প্রত্যহং লোকযাত্রায়াঃ প্রত্যক্ষং স্ত্রীনিবন্ধনং । স্ত্রীগণ অপত্যের উৎপাদন, অপত্যের পালন ও প্রত্যহ-লোকযাত্রার প্রত্যক্ষ নিদান হয়েন। যেখানে মকু বলিয়াছেন : যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমস্তে তত্র দেবতাঃ । সেইখানেই বলিয়াছেন : “যদিহি স্ত্রী ন রোচেত পুমাংসং ন প্রমোদয়েং। অপ্রমোদাৎ পুনঃ পুংসঃ প্রজনং ন প্রবর্ততে । নারী যদি দীপ্তি প্রাপ্ত না হন তাহা হইলে তিনি স্বামীর হর্যোৎপাদন করিতে পারেন না। স্বামীর হর্ষোংপাদন করিতে না পারিলে সন্তানোৎপাদন সম্পন্ন হয় না । এই-সমস্ত দেখিয়া মনে হইতেছে সংসারযাত্রানির্বাহই হিন্দুবিবাহের মুখ্য উদ্দেশু । এবং কেবল সেই উদ্দেশ্যেই যতটা একীকরণ সাংসারিক হিসাবে আবশ্বক তাহার প্রতি হিন্দুধর্মের বিশেষ মনোযোগ । অনেক সময়ে সংসারযাত্রানির্বাহের সহায়তা-জন্তই পুরুষ দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করিতে বাধ্য। কারণ, অপত্য উৎপাদন যখন বিবাহের প্রধান উদ্দেশ্য তখন বন্ধ্যা স্ত্রী সত্ত্বে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ শাস্ত্রমতে অষ্ঠায় হইতে পারে না। এমন-কি, প্রাচীনকালে অশক্ত স্বামীর নিয়োগাহসারে অথবা নিরপত্য স্বামীর মৃত্যুতে দেবরের দ্বারা সস্তানোৎপাদন স্ত্রীলোকের পক্ষে ধর্মহানিজনক ছিল না । মহাভারতে ইহার অনেক উদাহরণ আছে । অতএব সস্তান-উৎপাদন, সস্তানপালন ও লোকযাত্রানির্বাহ যদি হিন্দুবিবাহের মুখ্য উদ্দেশ্য হয় তবে দেখা যাইতেছে, উক্ত কর্তব্যসাধনের পক্ষে স্ত্রীলোকের একপতিনিষ্ঠ হওয়ার যত আবশ্বক পুরুষের পক্ষে একপত্নীনিষ্ঠ হইবার তেমন আবশ্বক নাই । কারণ, বহুপতি থাকিলে সস্তানপালন ও লোকযাত্রার বিশেষ ব্যাঘাত ঘটে, কিন্তু বহুপত্নীতে সে-ব্যাঘাত না ঘটিতেও পারে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে দ্বিতীয়বার বিবাহ সংসারযাত্রার সুবিধাজনক হইতে পারে, কিন্তু বিধবার দ্বিতীয়বার বিবাহ অধিকাংশস্থলে সংসারে বিশৃঙ্খলা আনয়ন করে । কারণ, বিধবার যদি সস্তানাদি থাকে তবে সেই সন্তানদিগকে হয় এক কুল হইতে কুলাস্তরে লইয়া যাইতে হয়, নচেৎ তাহাদিগকে মাতৃহীন হইয়া থাকিতে হয়। সস্তানাদি না থাকিলেও বিধবা রমণীকে পুরাতন ভর্তৃকুল হইতে নূতন ভর্তৃকুলে লইয়া যাওয়া নানাকারণে সমাজের অস্বথ ও অস্ববিধাজনক ; অতএব যখন সাংসারিক অসুবিধার কথা হইতেছে, কোনো প্রকার