পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8е е রবীন্দ্র-রচনাবলী মহেক্স লজ্জা ঢাকিতে চেষ্টা করিয়া কহিল, "না, সেটা কাটাইয়া দেওয়া গেছে।” স্বান করিয়া আসিয়া বিনোদিনী যখন দেখা দিল, তখন বিহারী প্রথমটা কিছুই বলিতে পারিল না। বিনোদিনী ও মহেঞ্জের যে-দৃশু সে দেখিয়াছিল, তাহ তাহার মনে মুদ্রিত ছিল । বিনোদিনী বিহারীর অনতিদূরে আসিয়া মৃদুস্বরে কহিল, “কী ঠাকুরপো, একেবারে চিনিতেই পার না নাকি ৷” বিহারী কহিল, “সকলকেই কি চেনা যায় ।” বিনোদিনী কহিল, "একটু বিবেচনা থাকিলেই যায়।” বলিয়া খবর দিল, “পিসিমা, খাবার প্রস্তুত হইয়াছে।” মহেন্দ্র-বিহারী খাইতে বসিল ; রাজলক্ষ্মী অদূরে বসিয়া দেখিতে লাগিলেন এবং বিনোদিনী পরিবেষণ করিতে লাগিল । মহেন্দ্রের খাওয়ায় মনোযোগ ছিল না, সে কেবল পরিবেষণে পক্ষপাত লক্ষ্য করিতে লাগিল । মহেন্দ্রের মনে হইল, বিহারীকে পরিবেষণ করিয়া বিনোদিনী যেন একটা বিশেষ মুখ পাইতেছে। বিহারীর পাতেই যে বিশেষ করিয়া মাছের মুড়া ও দধির সর পড়িল, তাহার উত্তম কৈফিয়ত ছিল— মহেন্দ্র ঘরের ছেলে, বিহারী নিমন্ত্রিত। কিন্তু মুখ ফুটিয়া নালিশ করিবার ভালো হেতুবাদ ছিল না বলিয়াই মহেন্দ্র আরো বেশি করিয়া জলিতে লাগিল । অসময়ে বিশেষ সন্ধানে তপসিমাছ পাওয়া গিয়াছিল, তাহার মধ্যে একটি ডিমওয়ালা ছিল ; সেই মাছটি বিনোদিনী বিহারীর পাতে দিতে গেলে বিহারী কহিল, “না না, মহিনদাকে দাও, মহিনদা ভালোবাসে ।” মহেন্দ্র তীব্র অভিমানে বলিয়া উঠিল, “না না, আমি চাই না।” শুনিয়া বিনোদিনী দ্বিতীয় বার অঙ্কুরোধ মাত্র না করিয়া সে-মাছ বিহারীর পাতে ফেলিয়া দিল । আহারান্তে দুই বন্ধু উঠিয়া ঘরের বাহিরে আসিলে বিনোদিনী তাড়াতাড়ি আসিয়া কহিল, “বিহারী-ঠাকুরপো, এখনই যাইয়ে না, উপরের ঘরে একটু বসিবে চলো ।” বিহারী কহিল, “তুমি থাইতে যাইবে না ?” বিনোদিনী কহিল, "না, আজ একাদশী ।” * নিষ্ঠুর বিক্রপের একটি সূক্ষ্ম হাস্তরেখা বিহারীর ওষ্ঠপ্রাস্তে দেখা দিল— তাহার অর্থ এই যে, একাদশী-করাও আছে । অনুষ্ঠানের ক্রটি নাই । সেই হাস্তের আভাসটুকু বিনোদিনীর দৃষ্টি এড়ায় নাই– তবু সে যেমন তাহার