পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি ७२१ অপটু আশা কানে কানে কহিল, “আমি ঠিক পারিব না, ঘুম ভাঙাইয়া দিব— তুমি সরাইয়া দাও।” মহেন্দ্র সরাইয়া দিল । - অবশেষে যেই ছবি লইবার জন্য ক্যামেরার মধ্যে কাচ পুরিয়া দিল, অমনি যেন কিসের শব্দে বিনোদিনী নড়িয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিল । আশা উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। বিনোদিনী বড়োই রাগ করিল— তাহার জ্যোতির্ময় চক্ষু দুইটি হইতে মহেঞ্জের প্রতি অগ্নিবাণ বর্ষণ করিয়া কহিল, “ভারি অন্যায় ।” 疇 মহেন্দ্ৰ কহিল, "অন্যায়, তাহার আর সন্দেহ নাই। কিন্তু চুরিও করিলাম, অথচ চোরাই মাল ঘরে আসিল না, ইহাতে যে আমার ইহকাল পরকাল দুই গেল । অন্যায়টাকে শেষ করিতে দিয়া তাহার পরে দণ্ড দিবেন।” আশাও বিনোদিনীকে অত্যন্ত ধরিয়া পড়িল । ছবি লওয়া হইল। কিন্তু প্রথম ছবিটা খারাপ হইয়া গেল । সুতরাং পরের দিন আর-একটা ছবি না লইয়া চিত্রকর ছাড়িল না। তার পরে আবার দুই সখীকে একত্র করিয়া বন্ধুত্বের চিরনিদর্শনস্বরূপ একখানি ছবি তোলার প্রস্তাবে বিনোদিনী না বলিতে পারিল না। কহিল, "কিন্তু এইটেই শেষ ছবি ।” শুনিয়া মহেন্দ্র সে-ছবিটাকে নষ্ট করিয়া ফেলিল। এমনি করিয়া ছবি তুলিতে তুলিতে আলাপ-পরিচয় বহুদূর অগ্রসর হইয়া গেল । S(t বাহির হইতে নাড়া পাইলে ছাই-চাপা আগুন আবার জলিয়া উঠে। নবদম্পতির প্রেমের উৎসাহ যেটুকু মান হইতেছিল, তৃতীয় পক্ষের ঘা খাইয়া সেটুকু আবার জাগিয়া উঠিল । আশার হাস্তালাপ করিবার শক্তি ছিল না, কিন্তু বিনোদিনী তাহা অজস্র জোগাইতে পারিত ; এইজন্য বিনোদিনীর অন্তরালে আশা ভারি একটা আশ্রয় পাইল । মহেন্দ্রকে সর্বদাই আমোদের উত্তেজনায় রাখিতে তাহাকে আর অসাধ্যসাধন করিতে হইত না । বিবাহের অল্পকালের মধ্যেই মহেন্দ্র এবং আশা পরস্পরের কাছে নিজেকে নিঃশেষ করিবার উপক্রম করিয়াছিল— প্রেমের সংগীত একেবারেই তারস্বরের নিখাদ হইতেই শুরু হইয়াছিল— স্বদ ভাঙিয়া না খাইয়া তাহারা একেবারে মূলধন উজাড় করিবার