পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૧8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ধ্রুব তেমনি তাহাকে টানিয়া তাহাকে জড়াইয় তাহাকে চুমো খাইয়া কোনোক্রমে তাহার পূর্বভাব ফিরাইয়া আনিবার অনেক চেষ্টা করিল। অবশেষে অকৃতকাৰ হইয়া মুখের মধ্যে গোটা দুয়েক আঙুল পুরিয়া দিয়া বসিয়া রছিল। রাজা গ্রুবের মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া তাহাকে বারবার চুম্বন করিলেন। 拳 অবশেষে কছিলেন, "ধ্রুব, আমি তবে যাই।” ধ্রুব রাজার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “আমি যাব ।” রাজা কহিলেন, “তুমি কোথায় যাবে, তুমি তোমার বাপের কাছে থাকে।” ধ্রুব কহিল, “না আমি যাব।” এমন সময় কুটির হইতে বৃদ্ধ পরিচারিকা বিড়বিড় করিয়া বকিতে বকিতে উপস্থিত হইল, সবেগে গ্রুবের হাত ধরিয়া টানিয়া কহিল, "চল।” ধ্রুব অমনি সভয়ে সবলে দুই হাতে রাজাকে জড়াইয়া রাজার বুকের মধ্যে মুখ লুকাইয়া রহিল। রাজা কাতর হইয়া ভাবিলেন, বক্ষের শিরা টানিয়া ছিড়িয়া ফেলা যায় তবু এ দুটি হাতের বন্ধন কি ছেড়া যায়। কিন্তু তাও ছিড়িতে হইল। আস্তে আস্তে ধ্রুবের দুই হাত খুলিয়া বলপূর্বক ধ্রুবকে পরিচারিকার হাতে দিলেন। এব প্রাণপণে কাদিয়া উঠিল, হাত তুলিয়া কহিল, “বাবা, আমি যাব।” রাজা আর পিছনে না চাহিয়া দ্রুত ঘোড়ায় চড়িয়া ঘোড়া ছুটাইয়া দিলেন। যত দূর যান এবের আকুল ক্ৰন্দন শুনিতে পাইলেন, ধ্রুব কেবল তাহার দুই হাত তুলিয়া বলিতে লাগিল, “বাব, আমি যাব।” অবশেষে রাজার প্রশাস্ত চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল। তিনি আর পথঘাট কিছুই দেখিতে পাইলেম না। বাপজালে স্বর্যালোক এবং সমস্ত জগৎ যেন আচ্ছন্ন হইয়া গেল । ঘোড়া যেদিকে ইচ্ছা ছুটিতে লাগিল । পথের মধ্যে এক জায়গায় এক দল মোগল-সৈন্ত আসিয়া রাজাকে লক্ষ্য করিয়া হাসিতে লাগিল, এমন কি তাহার অঙ্গুচরদের সহিত কিঞ্চিৎ কঠোর বিদ্রুপ আরম্ভ করিল। রাজার একজন সভাসদ অশ্বারোহণে যাইতেছিলেন, তিনি এই দৃপ্ত দেখিয়া রাজার নিকটে ছুটিয়া আসিলেন। কছিলেন, “মহারাজ, এ অপমান তো আর সঙ্ক হয় না। মহারাজের এই দীন বেশ দেখিয়া ইহারা এরূপ সাহসী হইয়াছে । এই লউন তরবারি, এই লউন উষ্ণীয। মহারাজ কিঞ্চিৎ অপেক্ষা করুন, আমি আমার লোক লইয়া আসিয়া এই বর্বরদিগকে এক বার শিক্ষা দিই।” রাজা কহিলেন, “না নয়ন রায়, আমার তরবারি-উকীযে প্রয়োজন নাই। ইহার1. জামার কী করিবে। আমি এখন ইহা অপেক্ষ অনেক গুরতর অপমান সব করিতে পারি। মুক্ত তরবারি তুলিয়া আমি এ পৃথিবীর লোকের নিকট হইতে আর সন্মান