পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি \O&O লোকের কাছে যাহারা বাঞ্ছার ধন, কিন্তু আয়ত্তের অতীত, আমার কাছে তাহারা চিরদিনের জন্য আপনি ধরা দিয়াছে,”— ইহাতে মহেন্দ্র বক্ষের মধ্যে একটা গর্বের স্ফীতি অনুভব করিল। মহেন্দ্র বিহারীকে কহিল, ”আচ্ছা চলো, যাওয়া যাক । তবে একটা গাড়ি ডাকো ।” 史为 মহেন্দ্র ঘরে ফিরিয়া আসিবামাত্র তাহার মুখ দেখিয়াই আশার মনের সমস্ত সংশয় ক্ষণকালের কুয়াশার মতো এক মুহুর্তেই কাটিয়া গেল। নিজের চিঠির কথা স্মরণ করিয়া লজ্জায় মহেন্দ্রের সামনে সে যেন মুখ তুলিতেই পারিল না । মহেন্দ্র তাহার উপরে ভৎসনা করিয়া কহিল, “এমন অপবাদ দিয়া চিঠিগুলা লিখিলে কী করিয়া ।” । বলিয়া পকেট হইতে বহুবার পঠিত সেই চিঠি তিনখানি বাহির করিল। আশা ব্যাকুল হইয়া কহিল, “তোমার পায়ে পড়ি, ও চিঠিগুলো ছিড়িয়া ফেলো।” বলিয়া মহেন্দ্রের হাত হইতে চিঠিগুলা লইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়িল । মহেন্দ্র তাহাকে নিরস্ত করিয়া সেগুলি পকেটে পুরিল । কহিল, “আমি কর্তব্যের অনুরোধে গেলাম, আর তুমি আমার অভিপ্রায় বুঝিলে না ? আমাকে সন্দেহ করিলে?” আশা ছল-ছল চোখে কহিল, "এবারকার মতো আমাকে মাপ করে । এমন আর কখনোই হইবে না ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, "কখনো না ?” আশা কহিল, "কখনো না ।” তখন মহেন্দ্র তাহাকে টানিয়া লইয়া চুম্বন করিল। আশা কহিল, "চিঠিগুলা দাও, ছিড়িয়া ফেলি।” মহেন্দ্ৰ কহিল, "না, ও থাক।” আশা সবিনয়ে মনে করিল, “আমার শাস্তিস্বরূপ এ চিঠিগুলি উনি রাখিলেন।” এই চিঠির ব্যাপারে বিনোদিনীর উপর আশার মনটা একটু যেন বাকিয়া দাড়াইল স্বামীর আগমনবার্তা লইয়া সে সর্থীর কাছে আনন্দ করিতে গেল না— বরঞ্চ বিনোদিনীকে একটু যেন এড়াইয়া গেল। বিনোদিনী সেটুকু লক্ষ্য করিল এবং কাজের ছল করিয়া একেবারে দূরে রহিল। মহেন্দ্ৰ ভাবিল, “এ তো বড়ো অদ্ভূত। আমি ভাবিয়াছিলাম, এবার বিনোদিনীকে বিশেষ করিয়াই দেখা যাইবে— উলটা হইল ? তবে সে চিঠিগুলার অর্থ কী।” নারীহদয়ের রহস্ত বুঝিবার কোনো চেষ্টা করিবে না বলিয়াই মহেন্দ্র মনকে