পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 9פש জয়সিংহ কহিলেন, “তা যদি সত্য হয়, তবে আমিই রাজরক্ত আনিব-নক্ষত্র রায়কে পাপে লিপ্ত করিব না।” রঘুপতি কহিলেন, “দেবীর আদেশ পালন করিতে কোনো পাপ নাই ।” জয়সিংহ। ‘পুণ্য আছে তো প্রভু। সে পুণ্য আমিই উপার্জন করিব।” রঘুপতি কহিলেন, “তবে সত্য করিয়া বলি বংস । আমি তোমাকে শিশুকাল হইতে পুত্রের অধিক যত্নে প্রাণের অধিক ভালোবাসিয়া পালন করিয়া আসিয়াছি, আমি তোমাকে হারাইতে পারিব না। নক্ষত্র রায় যদি গোবিন্দমাণিক্যকে বধ করিয়া রাজা হয়, তবে কেহ তাহাকে একটি কথা কহিবে না-কিন্তু তুমি যদি রাজার গায়ে হাত তোল তো তোমাকে আর আমি ফিরিয়া পাইব না।” জয়সিংহ কহিলেন, “আমার স্নেহে! পিতা, আমি অপদার্থ, আমার স্নেহে তুমি একটি পিপীলিকারও হানি করিতে পাইবে না। আমার প্রতি স্নেহে তুমি যদি পাপে লিপ্ত হও, তবে তোমার সে স্নেহ আমি বেশি দিন ভোগ করিতে পারিব না, সে স্নেহের পরিণাম কখনোই ভালো হইবে না ।” রঘুপতি তাড়াতাড়ি কহিলেন, “আচ্ছ, আচ্ছ, সে কথা পরে হইবে। কাল নক্ষত্র রায় আসিলে যা হয় একটা ব্যবস্থা হইবে।” জয়সিংহ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন, “আমিই রাজরক্ত আনিব । মায়ের নামে গুরুদেবের নামে ভ্ৰাতৃহত্যা ঘটিতে দিব না।” সপ্তম পরিচ্ছেদ জয়সিংহের সমস্ত রাত্রি নিদ্রা হইল না । গুরুর সহিত যে কথা লইয়া আলোচনা হইয়াছিল, দেখিতে দেখিতে তাহার শাখা-প্রশাখা বাহির হইতে লাগিল। অধিকাংশ সময়েই আরম্ভ আমাদের আয়ত্ত, শেষ আমাদের আয়ত্ত নহে। চিন্তা সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। জয়সিংহের মনে অনিবার্ধ বেগে এমন সকল কথা উঠিতে লাগিল যাহা তাহার আশৈশব বিশ্বাসের মূলে অবিশ্রাম আঘাত করিতে লাগিল। জয়সিংহ পীড়িত ক্লিষ্ট হইতে লাগিলেন । । কিন্তু দুঃস্বপ্নের মতো ভাবনা কিছুতেই ক্ষান্ত হইতে চায় না। যে দেৰীৰে জয়সিংহ এত দিন মা বলিয়া জানিতেন, গুরুদেব আজ কেন তাহার मांछ्रु अ*ाइब्र* করিলেন, কেন তাহাকে হৃদয়হীন শক্তি বলিয়া ব্যাখ্যা করিলেন। শক্তির সন্তোষই