পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি や>> বিলাস পরিহার করো”— সে-কথা শুনিয়া বুদ্ধেরাও তাহাদিগকে ভৎসনা করিতেছে না, বিজ্ঞেরাও তাহাদিগকে পরিহাস করিতেছে না ; এই কথা নিঃসংকোচে বলিবার এবং এই কথা নিস্তব্ধ হইয়া শুনিবার বল আমার কোথা হইতে পাইলাম। স্থখেই হউক আর দুঃখেই হইক, সম্পদেই হউক আর বিপদেই হউক, হৃদয়ে হৃদয়ে যথার্থ ভাবে মিলন হইলেই যাহার আবির্ভাব আর মুহূর্তকাল গোপন থাকে না, তিনি আমাদিগকে বিপদের দিনে এই বল দিয়াছেন, দুঃখের দিনে এই আনন্দ দিয়াছেন । আজ দুর্যোগের রাত্রে ষে বিদ্যুতের আলোক চকিত হইতেছে সেই আলোকে যদি আমরা রাজপ্রাসাদের সচিবদেরই মুখমণ্ডল দেখিতে থাকিতাম, তবে আমাদের অস্তরের এই উদার উদ্যমটুকু কখনোই থাকিত না । এই আলোকে আমাদের দেবালয়ের দেবতাকে, আমাদের ঐক্যাধিষ্ঠাত্রী অভয়াকে দেখিতেছি— সেইজন্যই আজ আমাদের উৎসাহ এমন সজীব হইয়া উঠিল । সম্পদের দিনে নহে, কিন্তু সংকটের দিনেই বাংলাদেশ আপন হৃদয়ের মধ্যে এই প্রাণ লাভ করিল। ইহাতেই বুঝিতে হইবে, ঈশ্বরের শক্তি যে কেবল সম্ভবের পথ দিয়াই কাজ করে, তাহা নহে ; ইহাতেই বুঝিতে হইবে, দুর্বলেরও বল আছে দরিদ্রেরও সম্পদ আছে এবং দুর্ভাগ্যকেই সৌভাগ্য করিয়া তুলিতে পারেন যিনি, সেই জাগ্রত পুরুষ কেবল আমাদের জাগরণের প্রতীক্ষায় নিস্তব্ধ আছেন । র্তাহার অনুশাসন এ নয় যে, “গবর্মেণ্ট তোমাদের মানচিত্রের মাঝখানে যে একটা কৃত্রিম রেখা টানিয়া দিতেছেন, তোমরা তাহাদিগকে বলিয়া কহিয়া কাদিয়া কাটিয়া, বিলাতি জিনিস কেনা রহিত করিয়া, বিলাতে টেলিগ্রাম ও দূত পাঠাইয়া তাহাদের অনুগ্রহে সেই রেখা মুছিয়া লণ্ড ।” তাহার অতুশাসন এই যে “বাংলার মাঝখানে যে-রাজাই যতগুলি রেখাই টানিয়া দিন, তোমাদিগকে এক থাকিতে হইবে— আবেদন-নিবেদনের জোরে নয়, নিজের শক্তিতে এক থাকিতে হইবে, নিজের প্রেমে এক থাকিতে হইবে । রাজার দ্বারা বঙ্গবিভাগ ঘটিতেও পারে, না-ও ঘটিতে পারে— তাহাতে অতিমাত্র বিষন্ন বা উল্লসিত হইয়ো না— তোমরা যে আজ একই আকাঙ্ক্ষা অনুভব করিতেছ, ইহাতেই আনন্দিত হও এবং সেই আকাজক্ষা তৃপ্তির জন্য সকলের মনে যে একই উদ্যম জন্মিয়াছে, ইহার দ্বারাই সার্থকতা লাভ করে !” অতএব, এখন কিছুদিনের জন্য কেবল মাত্র একটা হৃদয়ের আন্দোলন ভোগ করিয়া এই শুভ সুযোগকে নষ্ট করিয়া ফেলিলে চলিবে না। আপনাকে সংবরণ করিয়া, সংযত করিয়া এই আবেগকে নিত্য করিতে হইরে । আমাদের যে ঐক্যকে একটা আঘাতের সাহায্যে দেশের আদ্যস্তমধ্যে আমরা একসঙ্গে সকলে অনুভব করিয়াছি,— আমরা