পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় ७२१ হইবার সম্ভাবনা । জাতীয় ধনভাণ্ডার সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, উহার ইংরেজি নাম দেওয়াটাই মস্ত ভুল হইয়াছে। ইংরেজি নাম শুনিলে মনে একটা বিরাট ভাবের উদয় হয়। যদি এই ভাণ্ডারের নাম National Fund না রাখিয়া আমরা ‘বঙ্গভাণ্ডার’ রাখিতাম, তাহা হইলে ৭০ হাজার টাকা উঠিয়াছে শুনিয়া আমাদের তেমন দুঃখ হইত না । জাতীয় ধনভাণ্ডারে অল্প টাকা উঠিয়াছে বলিয়া র্যাহার। আক্ষেপ করেন, র্তাহারা ভুলিয়৷ যান যে, এত অল্পদিনের মধ্যে আমরা পূর্বে কখনও দেশের নিকট হইতে এমনতরে উত্তর পাই নাই। আমরা সাহেবদের নিন্দাপ্রশংসাকে বড়ো ভয় করি। আমাদের ক্ষুত্র আয়োজন দেখীিয়া সাহেবর। কী মনে করিতেছে এ বিষয়ে যদি আমরা বেশি ভাবনা না করি, তবে আমাদের নিজের যাহা সাধ্য তাহা অনেকটা শাস্তি ও উৎসাহের সঙ্গে করিয়া উঠিতে পারিব। যোগদানের সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, আজ যদি যথার্থই আমাদের প্রয়োজন উপস্থিত হইয়া থাকে, তবে দেশের ব্যবসায়ৰুদ্ধি আপনা-আপনি আমাদের অভাবমোচনে নিযুক্ত হইবে। এত আন্দোলনেও তেমন কোনো কাজ দেখা যাইতেছে না বলিয়া কেহ কেহ যে অণক্ষেপ করিতেছেন সে-সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, প্রথম-উত্তেজনার আবেগ কতকটা শান্ত হইয়া এখন কার্যের সময় আসিয়াছে। এখন নি:সন্দেহেই অনেকে নীরবে কাজ করিতেছেন, সুতরাং আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নাই। বর্তমান শিক্ষণসমস্যা সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, গবর্মেন্ট যদি দুই দিন পরে এই পরওয়ানা প্রত্যাহারও করেন, তবু যেন আমরা ইহার শিক্ষাটি কখনও ভুলিয়া না যাই । আমাদের শিক্ষাকে স্বাধীন করিবার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করিবার সময় এখন উপস্থিত হইয়াছে। ছাত্রেরা ধীরভাবে বিচার করিয়া দেখিবেন যে, তাহারা সত্যসত্যই গবর্মেন্টের সম্মান এবং চাকুরির মায়া পরিত্যাগ করিবার জন্য প্রস্তুত আছেন কি না। যদি তাহারা যথার্থই প্রস্তুত হইয়া থাকেন তবে নেতৃবর্গ নিঃসন্দেহ তাহদের শিক্ষার ব্যবস্থা করিবেন। ১৯শে কার্তিক (১৩১২] অপরাহ্লে ডন সোসাইটি’তে একটি ছাত্রসভার অধিবেশন । হয় । • • • শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ বর্তমান শিক্ষণসমস্যা সম্বন্ধে ] আলোচনা উত্থাপন করিয়া বলেন যে, বাংলাদেশে আজ যে-নবজীবনের উত্তেজনা লক্ষিত হইতেছে, তাহা দুই ভাগে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে— বিদেশী পণ্য বর্জনের সংকল্পে এবং স্বদেশের শিক্ষণকে স্বাধীন করিবার আকাজক্ষায় । কিরূপে স্বদেশী দ্রব্যের অভাবমোচন হইবে, তাহ ধীরভাবে চিন্তা না করিয়াই যেমন আমরা বিদেশী পণ্য বর্জনের সংকল্প করিয়াছিলাম, *তেমনই বিশুদ্ধ উৎসাহের সহিত যদি আজ আমরা স্বদেশের শিক্ষার ভার স্বহস্তে গ্রহণ করি, তবে আরম্ভ যত সামান্তই হউক না কেন আমরা ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহ সফলতালাভ করিতে পারিব । ছাত্রেরা যদি গবর্মেণ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অপমান সহ করিতে ন৷ পারিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকেন, তবে তাহদের সংকল্প দৃঢ় রাখিবেন । তাহা হইলে নেতারাও র্তাহীদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করিয়া থাকিতে