পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Գեր রবীন্দ্র-রচনাবলী ছিলেন । তার রাজত্বে পরধর্মসম্প্রদায়ের প্রতি উৎপীড়ন ছিল না। কেবল শাসননীতি নয়, তার সময়ে পারস্তে স্থাপত্য ও অন্যান্ত শিল্পকলা সর্বোচ্চসীমায় উঠেছিল। ৪৩ বৎসর রাজত্বের পর তার মৃত্যু হয়। n তার মৃত্যুর সঙ্গে তার মহিমার অবসান। অবশেষে একদা তার শেষ বংশধর শা স্বলতান হোসেন পারস্যবিজয়ী স্কুলতান মামুদের আসনতলে প্ৰণতি করে বললেন, পুত্র, যেহেতু জগদীশ্বর আমার রাজত্ব আর ইচ্ছা করেন না, অতএব আমার সাম্রাজ্য এই তোমার হাতে সমর্পণ করি।’ এর পরে আফগান রাজত্ব । শাসনকর্তাদের মধ্যে হত্যা ও গুপ্তহত্যা এগিয়ে চলল। চারি দিকে লুটপাট ভাঙাচোরা। অত্যাচারে জর্জরিত হল ইস্পাহান। অবশেষে এলেন নাদির শা। বাল্যকালে ছাগল চরাতেন ; অবশেষে একদিন ভাগ্যের চক্রান্তে আফগান ও তুর্কিদের তাড়িয়ে দিয়ে এই রাখাল চড়ে বসলেন শা আব্বাসের সিংহাসনে। তার জয়পতাকা দিল্লি পর্যন্ত উড়ল । স্বরাজ্যে যখন ফিরলেন সঙ্গে নিয়ে এলেন বহুকোটি টাকা দামের লুটের মাল ও ময়ূরতক্ত সিংহাসন। শেষবয়সে র্তার মেজাজ গেল বিগড়ে, আপন বড়োছেলের চোখ উপড়িয়ে ফেললেন । মাথায় খুন চড়ল। অবশেষে নিত্রিত অবস্থায় তাবুর মধ্যে প্রাণ দিলেন তার কোনো-এক অনুচরের ছুরির ঘায়ে ; শেষ হয়ে গেল বিজয়ী রাজমহিমা অখ্যাত মৃত্যুশয্যায়। তার পরে অর্ধশতাব্দী ধরে কাড়াকড়ি, খুনোখুনি, চোখ-ওপড়ানো । বিপ্লবের আবর্তে রক্তাক্ত রাজমুকুট লাল বুদবুদের মতো ক্ষণে ক্ষণে ফুটে ওঠে আর ফেটে যায়। কোথা থেকে এল কাজার-বংশীয় তুকি আগা মহম্মদ খা । খুন করে, লুঠ করে, হাজার হাজার নারী ও শিশুকে বন্দী করে আপন পাশবিকতার চুড়ে তুললে কর্মান শহরে, নগরবাসীর সত্তর হাজার উৎপাটিত চোখ হিসাব করে গ’নে নিলে। মহম্মদ খার দস্যবৃত্তির চরমকীতি রইল খোরাসানে, সেখানে নাদির শাহের হতভাগ্য অন্ধ পুত্র শা-রুখ ছিল রাজা। হিন্দুস্থান থেকে নাদির শাহের বহুমূল্য লুঠের মাল গুপ্ত রাজকোষ থেকে উদগীর্ণ করে নেবার জন্তে দস্থ্যপ্রেষ্ঠ প্রতিদিন শা-রুখকে যন্ত্রণ দিতে লাগল। অবশেষে একদিন শা-রুখের মুণ্ড ঘিরে একটা মুখোশ পরিয়ে তার মধ্যে সীসে গালিয়ে ঢেলে দিলে। এমনি করে শা-রুখের প্রাণ এবং ঔরঙ্গজেবের চুনি তার হস্তগত হল। তার পরে এশিয়ায় ক্রমে এসে পড়ল যুরোপের বণিকদল, ইতিহাসের আর-এক পর্ব আরম্ভ হল পূর্ব পশ্চিমের সংঘাতে। পারস্তে তার চক্রবাত্য যখন পাক দিয়ে উঠছিল তখন ওই কাজার-বংশীয় রাজা সিংহাসনে । বিদেশীর ঋণের নাগপাশে দেশকে জড়িয়ে সে ভোগবিলাসে উন্মত্ত, দুর্বল হাতের রাজদগু চালিত হচ্ছিল বিদেশীর তর্জনীসংকেতে ।