পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় QS) সৌভাগ্যট। সাধারণ লোকে যতখানি ভাবে তার চেয়ে অনেক বেশি । আমাদের কবি সাদি এক জায়গায় বলেছেন— হায় মানুষ ! এই জগংটা শুধু দৈহিক অহং-এর পুষ্টির জন্য নয় ; যথার্থ তত্ত্বজ্ঞানী মানুষের সন্ধান পাওয়া বড়োই কঠিন ; ভোরের পাখির সুরলহরী নিদ্রিত মানুষ জানে না ; মানুষের জগৎটা যে কী তা পশু কেমন করে জানবে। তেমনি সাধারণ লোকে না বুঝলেও এটা সত্য যে, ডক্টর ঠাকুরের এই পারস্তে আগমন সেই ভারতীয় জাতিরই মানসিক উৎকর্ষ ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার নিদর্শন যে জাতি একটি অপরূপ পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে । এমন জাতিই তার অতীত গৌরব আর উজ্জলতর ভবিষ্যৎ নিয়ে ন্যায়ত দাবি করতে পারে যে, মানুষের চিস্তাকাশে অত্যুজ্জল তারকারাজির মধ্যে অনেকগুলি তারই, আর জগৎকে সে এক অতি গভীর দর্শনশাস্ত্র দান করেছে। নীতিতত্ত্ব ও সৌন্দর্যতত্ত্বের দিক দিয়ে অতি প্রাচীনকাল থেকে এ দেশ ও ভারতবর্ষের মধ্যে একটা নিবিড় অচ্ছেদ্য যোগ রয়েছে। সাসানীয় যুগের প্রাচীনতম সাহিত্যের যে-সব পুথি আজ প্রচলিত আছে তার মধ্যেও পাওয়া যায় এই দুই জাতির পরস্পর আধ্যাত্মিক ভাববিনিময়ের কথা। দেখা যায়, আজকের যুগের মতো প্রাচীন পারস্তবাসীরাও ভারতবর্ষকে সন্ত্রমের চোখে দেখত, গভীর চিস্তা ও নিগৃঢ় তত্ত্বরাজির দেশ হিসেবে। প্রথম সাসানীয় সম্রাট অর্দশির বাবেকনের কার্নামেতে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি র্তার রাজ্যসম্বন্ধে ভবিষ্যদবাণী শুনতে চান তখন কোনো ভারতীয় সম্রাটের নিকট তিনি দূত পাঠিয়েছিলেন। ফরদৌসীর শা’নামেতেও এ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় । ইরানে ইসলামধর্মের প্রসার ও ভারতে তার প্রভাববিস্তৃতির পর থেকে ভারতপারস্তের এই মিলনস্থত্র পরিবর্তনপরম্পরার ভিতর দিয়ে নব নব তেজে দৃঢ়ীভূত হয়েছে— এবং আশা করা যায়, এর পরিসর ক্রমেই বিস্তৃত হবে। এইখানে আমাদের অতিথির অবগতির জন্য বলাটা প্রাসঙ্গিক হবে— বর্তমান মহারাজের নিকট পারস্তজাতি কতখানি ঋণী। চিরসতর্ক দৃষ্টি নিয়ে তিনি বিশৃঙ্খলের মধ্যে শৃঙ্খলা স্থাপন করেছেন ; অক্লান্ত উদ্যম ও অত্যাশ্চর্য গঠনশক্তির দ্বারা তিনি এখানে এমন একটা শাসনযন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছেন যা সর্ববিষয়েই র্তার উন্নতিশীল প্রজাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। চতুর্দিক যখন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, দেশ যখন সর্বনাশের প্রান্তে এসে টলমল করছে, তখন যেন তিনি কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন স্বর্গ