পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86.8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মোটা মোটা পাচক রান্না চড়িয়েছে, আমাদের দেশে যজ্ঞের রান্নার মতো। বুঝলুম রাত্রিভোজের উদ্যোগপর্ব। অতিথির সন্মানে আজ এখানে সরকারি ছুটি। সেই স্বযোগে অনেকক্ষণ থেকে লোক জমায়েত হয়েছিল। আমাদের দেরি হওয়াতে ফিরে গেছে। ধারা বাকি আছেন তাদের সঙ্গে বসে গেলুম। সকলেরই মুখে তাদের রাজার কথা। বললেন, তিনি অসামান্ত প্রতিভার জোরে দশ বছরের মধ্যে পারস্তের চেহারা বদলিয়ে দিয়েছেন। এইখানে আধুনিক পারস্য-ইতিহাসের একটুখানি আভাস দেওয়া যেতে পারে। কাজার-জাতীয় আগা মহম্মদ খাঁর দানবিক নিষ্ঠুরতায় এই ইতিহাসের বর্তমান অধ্যায় আরম্ভ হল। এরা পারসিক নয়। কাজাররা তুর্কিজাতের লোক। তৈমুরলঙ এদের পারস্তে নিয়ে আসে। বর্তমানে রেজা শ৷ পহ্নবীর আমলের পূর্ব পর্যন্ত পারস্তের রাজসিংহাসন এইজাতীয় রাজাদের হাতেই ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে শী নাসিরউদ্দিন ছিলেন রাজা । তখন থেকে রাষ্ট্রবিপ্লবের স্থচনা দেখা দিল। এই সময়ে পারস্তের মন যে জেগে উঠেছে তার একটা নিদর্শন দেখা যায় বাবিপন্থীদের ধর্মবিপ্লবে। ঠিক এই সময়েই রামমোহন রায় বাংলাদেশে প্রচার করেছিলেন ধর্মসংস্কার। নাসিরউদ্দিন অতি নিষ্ঠুরভাবে এই সম্প্রদায়কে দলন করেন । পারস্তের রাজাদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন প্রথম যুরোপে যান আর তার আমল থেকেই দেশকে বিদেশীর ঋণজালে জড়িত করা শুরু হল। র্তার ছেলে মজফ ফরউদিনের আমলে এই জাল বিস্তৃত হবার দিকে চলল। তামাকের ব্যাবসার একচেটে অধিকার তিনি দিলেন এক ইংরেজ কোম্পানিকে। এটা দেশের লোকের সইল না, তারা তামাক বয়কট করে দিলে। দেশমৃদ্ধ তামাকখোরদের তামাক ছাড়া সোজা নয়, কিন্তু তাও ঘটল। এই উপায়ে এটা রদ হয়ে গেল, কিন্তু দণ্ড দিতে হল কোম্পানিকে খুব লম্বা মাপে। তার পরে লাগল রাশিয়া, তার হাতে রেলওয়ে। বেলজিয়ম থেকে কর্মচারী এল পারস্তে ট্যাক্স আদায়ের কাজে, ইংরেজও উঠে পড়ে লাগল পারস্তবিভাগের কাজে । এ দিকে দেশের লোকের কাছ থেকে ক্রমাগত তাগিদ আসছে রাষ্ট্রসংস্কারের। শেষকালে রাজাকে মেনে নিতে হল। প্রথম পারসিক পার্লামেণ্ট খুলল ১৯০৬ খ্রীস্টাব্দে অক্টোবরে।