পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \ტჯ\ტ সেই লোকটাও সংজ্ঞাপ্রাপ্ত হইল, আর উঠবার চেষ্টা করিয়া বেদনায় আর্তনাদ করিয়া উঠিল । t সন্ন্যাসী কহিলেন, “এ কী, মৃত্যুঞ্জয় যে ! তোমার এ মতি হইল কেন।” মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “বাবা, মাপ করে । ভগবান আমাকে শাস্তি দিয়াছেন। তোমাকে পাথর ছুড়িয়া মারিতে গিয়া সামলাতেই পারি নাই— পিছলে পাথরস্থদ্ধ আমি পড়িয়া গেছি। পা-টা নিশ্চয় ভাঙিয়া গেছে।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “আমাকে মারিয়া তোমার কী লাভ হইত।” মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “লাভের কথা তুমি জিজ্ঞাসা করিতেছ! তুমি কিসের লোভে আমার পূজাঘর হইতে লিখনখানি চুরি করিয়া এই স্বরঙ্গের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতেছ। তুমি চোর, তুমি ভগু! আমার পিতামহকে যে সন্ন্যাসী ওই লিখনখানি দিয়াছিলেন তিনি বলিয়াছিলেন, আমাদেরই বংশের কেহ এই লিখনের সংকেত বুঝিতে পারিবে । এই গুপ্ত ঐশ্বর্য আমাদেরই বংশের প্রাপ্য। তাই আমি এ কয়দিন না থাইয়া না ঘুমাইয়া ছায়ার মতো তোমার পশ্চাতে ফিরিয়াছি। আজ যখন তুমি বলিয়া উঠিলে ‘পাইয়াছি তপন আমি আর থাকিতে পারিলাম না। আমি তোমার পশ্চাতে আসিয়া ওই গর্তটার ভিতরে লুকাইয়া বসিয়া ছিলাম। ওখান হইতে একটা পাথর খসাইয়া তোমাকে মারিতে গেলাম, কিন্তু শরীর দুর্বল, জায়গাটাও অত্যন্ত পিছল— তাই পড়িয়া গেছি। এখন তুমি আমাকে মারিয়া ফেলে। সেও ভালো— আমি যক্ষ হইয়া এই ধন আগলাইব— কিন্তু তুমি ইহা লইতে পারিবে না, কোনোমতেই না। যদি লইতে চেষ্টা কর, আমি ব্রাহ্মণ, তোমাকে অভিশাপ দিয়া এই কূপের মধ্যে বাপ দিয়া পড়িয়া আত্মহত্যা করিব। এ ধন তোমার ব্রহ্মরক্ত গোরক্ততুল্য হইবে— এ ধন তুমি কোনোদিন মুখে ভোগ করিতে পরিবে না। আমাদের পিতা পিতামহ এই ধনের উপরে সমস্ত মন রাখিয়া মরিয়াছেন– এই ধনের ধ্যান করিতে করিতে আমরা দরিদ্র হইয়াছি— এই ধনের সন্ধানে আমি বাড়িতে অনাথা স্ত্রী ও শিশুসস্তান ফেলিয়া আহারনিদ্রা ছাড়িয়া লক্ষ্মীছাড়া পাগলের মতো মাঠে ঘাটে ঘুরিয়া বেড়াইতেছি —এ ধন তুমি আমার চোখের সম্মুখে কখনো লইতে পারিবে না।” " سما সন্ন্যাসী কহিলেন, “মৃত্যুঞ্জয়, তবে শোনো। সমস্ত কথা তোমাকে বলি। “তুমি জান, তোমার পিতামহের এক কনিষ্ঠ সহোদর ছিল, তাহার নাম ছিল শংকর ।”