পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s পারস্তে 8(t\O পথের প্রাস্তে কোথাও-ব৷ গিরিনী চলেছে পাথরের মধ্য দিয়ে পথ কেটে। কিন্তু তারা তো লোকালয়ের ধাত্রীর কাজ করছে না। মানুষ কোথায় । মাঠে মাঝে মাঝে আকন্দগাছ কুলগাছ উইলো— মাঝে মাঝে গমের খেতে চাষের পরিচয় পাই, কিন্তু চাষীর পরিচয় পাই নে। মধ্যাহ্ন পেরিয়ে যায়। শিরাজের পুথ দীর্ঘ। এক দিনে যেতে কষ্ট হবে বলে স্থির হয়েছে খজেরুনে গবর্নরের আতিথ্যে মধ্যাহ্নভোজন সেরে রাত্রিযাপন করব । কিন্তু বিলম্বে বেরিয়েছি, সময়মত সেখানে পৌছবার আশা নেই, তাই পথে কোনারুতাখতে নামে এক জায়গায় প্রহরীদের মেটে আড্ডায় আমাদের মোটর গাড়ি থামল। মাটির মেঝের পরে তাড়াতাড়ি কম্বল কাপে ট বিছিয়ে দিলে। সঙ্গে আহার্য ছিল, খেয়ে নিলুম। মনে হল, এ যেন বইয়ে পড়া গল্পের পান্থশালা, খেজুর-কুঞ্জের মাঝখানে । এবার পাহাড়ে আঁকাবঁকা চড়াই পথে উঠছি। পাহাড়গুলো সম্পূর্ণ টাক-পড়া, এমন-কি, পাথরেরও প্রাধান্ত কম। বড়ে বড়ো মাটির স্তুপ। যেন মুড়িয়ে দেওয়া দৈত্যের মাথা । বোঝা যায় এটা বৃষ্টিবিরল দেশ, নইলে গাছের শিকড় যে মাটিকে বেঁধে রাখে নি বৃষ্টির আঘাতে সে মাটি কতদিন টিকতে পারে। স্বল্পপথিক পথে মাঝে মাঝে কেরোসিনের বোঝা নিয়ে গাধা চলেছে। বোঝাই-করা বড়ো বড়ো সরকারি মোটর বাস আমাদের পথ বঁচিয়ে নড়বড় করে ছুটেছে নীচের দিকে। পাহাড়ের পর পাহাড়, তৃণহীন জনহীন রুক্ষ, যেন পৃথিবীর বুক থেকে একটা তৃষার্ত দৈন্তের অশ্রুহীন কান্না ফুলে ফুলে উঠে শক্ত হয়ে গেছে। বেলা যায়। এক জায়গায় দেখি পথের মধ্যে থজেরুনের গবর্নর ঘোড়সওয়ার পাঠিয়েছেন আমাদের অগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে । বোঝা গেল তারা অনেকক্ষণ ধরে প্রতীক্ষা করছেন। প্রাসাদে পৌছলুম। বড়ো বড়ো কমলালেবুগাছের ঘনসংহত বীথিক ; মিথচ্ছায়ায় চোখ জুড়িয়ে দিলে। সেকালের মনোরম বাগান, নাম বাগ-ই-নজর। নিঃস্ব রিক্ততার মাঝখানে হঠাৎ এইরকম সবুজ ঐশ্বর্যের দানসত্র, এইটেই পারস্তের বিশেষত্ব। বাগানের তরুতলে আমাদের ভোজের আয়োজন। কিন্তু এখনকার মতো ব্যর্থ হল। আমি নিরতিশয় ক্লান্ত । একটি কাপেট-বিছানো ছোটো ঘরে থাটের উপর শুয়ে পড়লুম। বাতাসে তাপ নেই, সামনে খোলা দরজা দিয়ে ঘন সবুজের উচ্ছ্বাস চোখে এসে পড়ছে । d কিছুক্ষণ পরে বিছানা ছেড়ে বাগানে গিয়ে দেখি, গাছতলায় বড়ে বড়ো ডেকচিতে