পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\}\}o রবীন্দ্র-রচনাবলী এই চক্রটি মৃত্যুঞ্জয়ের স্থপরিচিত। কত অমাবস্তা-রাত্রে পূজাগৃহে স্বগন্ধ ধূপের ধূমে স্বতীপালোকে তুলট কাগজে অঙ্কিত এই চক্ৰচিহ্নের উপরে ঝুকিয়া পড়িয়া রহস্তভেদ করিবার জন্য একাগ্রমনে সে দেবীর প্রসাদ যাচঞা করিয়াছে। আজ অভীষ্টসিদ্ধির অত্যন্ত সন্নিকটে আসিয়া তাহার সর্বাঙ্গ যেন কঁাপিতে লাগিল। পাছে তীরে আসিয়া তরী ভোবে, পাছে সামান্য একটা ভুলে তাহার সমস্ত নষ্ট হইয়া যায়, পাছে সেই সন্ন্যাসী পূর্বে আসিয়া সমস্ত উদ্ধার করিয়া লইয়া গিয়া থাকে, এই আশঙ্কায় তাহার বুকের মধ্যে তোলপাড় করিতে লাগিল। এখন যে তাহার কী কর্তব্য তাহ। সে ভাবিয়া পাইল না। তাহার মনে হইল, সে হয়তো তাহার ঐশ্বর্যভাণ্ডারের ঠিক উপরেই বসিয়া আছে, অথচ কিছুই জানিতে পাইতেছে না। বসিয়া বসিয়া সে কালীনাম জপ করিতে লাগিল ; সন্ধ্যার অন্ধকার নিবিড় হইয়া আসিল ; ঝিল্লির ধ্বনিতে বনভূমি মুখর হইয়া উঠিল । (t এমন সময় কিছুদূর ঘন বনের মধ্যে অগ্নির দীপ্তি দেখা গেল। মৃত্যুঞ্জয় তাহার প্রস্তরাসন ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িল আর সেই শিখা লক্ষ্য করিয়া চলিতে লাগিল । বহুকষ্টে কিছুদূর গিয়া একটা অশথগাছের গুড়ির অন্তরাল হইতে স্পষ্ট দেখিতে পাইল, তাহার সেই পরিচিত সন্ন্যাসী অগ্নির আলোকে সেই তুলটের লিখন মেলিয়া একটা কাঠি দিয়া ছাইয়ের উপরে একমনে অঙ্ক কষিতেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের ঘরের সেই পৈতৃক তুলটের লিখন! আরে ভগু, চোর! এইজন্তই সে মৃত্যুঞ্জয়কে শোক করিতে নিষেধ করিয়াছিল বটে ! সন্ন্যাসী একবার করিয়া অঙ্ক কষিতেছে আর একটা মাপকাঠি লইয়া জমি মাপিতেছে– কিয়দর মাপিয়া হতাশ হইয়া ঘাড় নাড়িয়া পুনর্বার আসিয়া অঙ্ক কষিতে প্রবৃত্ত হইতেছে। এমনি করিয়া রাত্রি যখন অবসানপ্রায়, যখন নিশাস্তের শীতবায়ুতে বনস্পতির অগ্রশাখার পল্লবগুলি মর্মরিত হইয়া উঠিল, তখন সন্ন্যাসী সেই লিখনপত্র গুটাইয়া লইয়৷ চলিয়া গেল । মৃত্যুঞ্জয় কী করিবে ভাবিয়া পাইল না। ইহা সে নিশ্চয় বুঝিতে পারিল ষে, সন্ন্যাসীর সাহায্য ব্যতীত এই লিখনের রহস্ত ভেদ করা তাহার সাধ্য হুইবে না। লুব্ধ সন্ন্যাসী ষে মৃত্যুঞ্জয়কে সাহায্য করিবে না তাহাও নিশ্চিত। অতএব গোপনে সন্ন্যাসীর