পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سطوانا সন্ন্যাসী কহিলেন, “ধন চাও না ? তবে আমার হাত ধরে। আমার সুঙ্গে চলে ।” এবারে আর আলো জলিল না। এক হাতে যষ্টি ও এক হাতে সন্ন্যাসীর উত্তরীয় ধরিয়া মৃত্যুঞ্জয় ধীরে ধীরে চলিতে লাগিল। বহুক্ষণ ধরিয়া অনেক আঁকাবাক পথ দিয়া অনেক ঘুরিয়া ফিরিয়া এক জায়গায় আসিয়া সন্ন্যাসী কহিলেন, “দাড়াও ” মৃত্যুঞ্জয় দাড়াইল। তাহার পরে একটা মরিচা-পড়া লোহার দ্বার-খোলার উৎকট শব্দ শোনা গেল। সন্ন্যাসী মৃত্যুঞ্জয়ের হাত ধরিয়া কহিলেন, “এসো।” মৃত্যুঞ্জয় অগ্রসর হইয়া যেন একটা ঘরে প্রবেশ করিল। তখন আবার চকুমকি ঠোকার শব্দ শোনা গেল। কিছুক্ষণ পরে যখন মশাল জলিয়া উঠিল তখন, এ কী আশ্চর্য দৃশ্য ! চারি দিকে দেয়ালের গায়ে মোটা মোটা সোনার পাত ভূগর্ভরুদ্ধ কঠিন স্থর্যালোকপুঞ্জের মতো স্তরে স্তরে সজ্জিত। মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দুটা জলিতে লাগিল । সে পাগলের মতো বলিয়া উঠিল, “এ সোনা আমার – এ আমি কোনোমতেই ফেলিয়া যাইতে পারিব না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “আচ্ছা, ফেলিয়া যাইয়ো না ; এই মশাল রহিল— আর এই ছাতু, চিড়া আর বড়ে এক ঘটি জল রাখিয়া গেলাম।” so. দেখিতে দেখিতে সন্ন্যাসী বাহির হইয়া আসিলেন, আর এই স্বর্ণভাওরের লৌহদ্বারে কপাট পড়িল । মৃত্যুঞ্জয় বারবার করিয়া এই স্বর্ণপুঞ্জ স্পর্শ করিয়া ঘরময় ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। ছোটো ছোটো স্বর্ণখণ্ড টানিয়া মেজের উপর ফেলিতে লাগিল, কোলের উপর তুলিতে লাগিল, একটার উপরে আর-একটা আঘাত করিয়া শব্দ করিতে লাগিল, সর্বাঙ্গের উপর বুলাইয় তাহার স্পর্শ লইতে লাগিল। অবশেষে শ্ৰান্ত হইয়া সোনার পাত বিছাইয় তাহার উপর শয়ন করিয়া ঘুমাইয়া পড়িল । জাগিয়া উঠিয়া দেখিল, চারি দিকে সোনা ঝকৃমক্‌ করিতেছে। সোনা ছাড়া আরকিছুই নাই। মৃত্যুঞ্জয় ভাবিতে লাগিল, পৃথিবীর উপরে হয়তো এতক্ষণে প্রভাত হইয়াছে, সমস্ত জীবজন্তু আনন্দে জাগিয়া উঠিয়াছে – তাহাদের বাড়িতে পুকুরের ধারের বাগান হইতে প্রভাতে যে একটি স্নিগ্ধ গন্ধ উঠিত তাহাই কল্পনায় তাহার নাসিকায় যেন প্রবেশ করিতে লাগিল। সে যেন স্পষ্ট চোখে দেখিতে পাইল, পাতিহাসগুলি তুলিতে দুলিতে কলরব করিতে করিতে সকালবেলায় পুকুরের জলের মধ্যে আসিয়া পড়িতেছে, আর বাড়ির ঝি বাম কোমরে কাপড় জড়াইয়া উর্ধের্বাখিত