পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* গল্পগুচ্ছ ©® ዓ শংকর কিছুদিন হইতে হরিহরকে মিনতি করিতে লাগিল, "দাদা, আমাকে সেই কাগজটা একবার ভালো করিয়া দেখিতে দাও-না।” হরিহর কহিল, “দূর পাগল। সে কাগজ কি আছে। বেটা ভগুসন্ন্যাসী কাগজে কতকগুলা হিজিবিজি কাটিয়া আমাকে ফাকি দিয়া গেল— আমি সে পুড়াইয়৷ ফেলিয়াছি।” শংকর চুপ করিয়া রহিল। হঠাৎ একদিন শংকরকে ঘরে দেখিতে পাওয়া গেল না। তাহার পর হইতে সে নিরুদ্দেশ । হরিহরের অন্ত সমস্ত কাজকর্ম নষ্ট হইল— গুপ্ত ঐশ্বর্যের ধ্যান এক মুহূর্ত সে ছাড়িতে পারিল না। মৃত্যুকাল উপস্থিত হইলে সে তাহার বড়ে ছেলে খামাপদকে এই সন্ন্যাসীদত্ত কাগজখানি দিয়া গেল । এই কাগজ পাইয়া খামাপদ চাকরি ছাড়িয়া দিল। জয়কালীর পূজায় আর একান্তমনে এই লিখনপাঠের চর্চায় তাহার জীবনটা যে কোন দিক দিয়া কাটিয়া গেল তাহা বুঝিতে পারিল না। মৃত্যুঞ্জয় খামাপদর বড়ে ছেলে। পিতার মৃত্যুর পরে সে এই সন্ন্যাসীদত্ত গুপ্তলিখনের অধিকারী হইয়াছে। তাহার অবস্থা উত্তরোত্তর যতই হীন হইয়া আসিতে লাগিল, ততই অধিকতর আগ্রহের সহিত ওই কাগজখানির প্রতি তাহার সমস্ত চিত্ত নিবিষ্ট হইল। এমন সময় গত অমাবস্তারাত্রে পূজার পর লিখনখানি আর দেখিতে পাইল না— সন্ন্যাসীও কোথায় অস্তধান করিল। মৃত্যুঞ্জয় কহিল, এই সন্ন্যাসীকে ছাড়া হইবে না। সমস্ত সন্ধান ইহার কাছ হইতেই মিলিবে । এই বলিয়। সে ঘর ছাড়িয়া সন্ন্যাসীকে খুজিতে বাহির হইল। এক বৎসর পথে পথে কাটিয়া গেল। \O গ্রামের নাম ধারাগোল । সেখানে মৃত্যুঞ্জয় মুদির দোকানে বসিয়া তামাক খাইতেছিল, আর অন্তমনুস্থ হইয়া নানা কথা ভাবিতেছিল। কিছু দূরে মাঠের ধার দিয়া একজন সন্ন্যাসী চলিয়া গেল। প্রথমটা মৃত্যুঞ্জয়ের মনোযোগ আকৃষ্ট হইল না। একটু পরে হঠাৎ তাহার মনে হইল, ষে লোকটা চলিয়া গেল এই তো সেই সন্ন্যাসী ।