পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૧8 রবীন্দ্র-রচনাবলী তারাপদ এত অনায়াসে পৈতৃক বাড়ি ছাড়িতে প্রস্তুত হইলেন দেখিয়া তাহার ঔদার্ষে তিনি বিস্মিত হইয়া গেলেন। তাহদের সদর মহকুমার বাড়ি তিনি কোনোদিন দেখেন নাই এবং তাহার প্রতি র্তাহার কিছুমাত্র মমতা ছিল না। ভবানী যখন র্তাহার মাতা ব্রজসুন্দরীকে সকল বৃত্তাস্ত জানাইলেন, তিনি কপালে করাঘাত করিয়া বলিলেন, “ওমা, সে কী কথা । আলন্দি তালুক তো আমার খোরপোষের জন্য আমি স্ত্রীধনস্বরূপে পাইয়াছিলাম— তাহার আয়ও তো তেমন বেশি নয়। পৈতৃক সম্পত্তিতে তোমার যে অংশ সে তুমি পাইবে না কেন।” ভবানী কহিলেন, “তারাপদ বলে, পিতা আমাদিগকে ওই তালুক ছাড়া আর-কিছু দেন নাই ।” ব্রজসুন্দরী কহিলেন, “সে কথা বলিলে আমি শুনিব কেন । কর্তা নিজের হাতে তাহার উইল দুই প্রস্থ লিখিয়াছিলেন– তাহার এক প্রস্থ আমার কাছে রাখিয়াছেন ; সে আমার সিন্দুকেই আছে।” தி সিন্দুক খোলা হইল। সেখানে আলদি তালুকের দানপত্র আছে কিন্তু উইল নাই। উইল চুরি গিয়াছে। পরামর্শদাতাকে ডাকা হইল। . লোকটি র্তাহাদের গুরুঠাকুরের ছেলে। নাম বগলাচরণ। সকলেই বলে তাহার ভারি পাকা বুদ্ধি। তাহার বাপ গ্রামের মন্ত্রদাতা আর ছেলেটি মন্ত্রণাদাতা । পিতাপুত্রে গ্রামের পরকাল ইহকাল ভাগাভাগি করিয়া লইয়াছে। অন্তের পক্ষে তাহার ফলাফল যেমনই হউক, তাহদের নিজেদের পক্ষে কোনো অসুবিধা ঘটে নাই । f বগলাচরণ কহিল, “উইল না-ই পাওয়া গেল। পিতার সম্পত্তিতে দুই ভায়ের তো সমান অংশ থাকিবেই।” এমন সময় অপর পক্ষ হইতে একটা উইল বাহির হইল। তাহাতে ভবানীচরণের অংশে কিছুই লেখে না। সমস্ত সম্পত্তি পৌত্রদিগকে দেওয়া হইয়াছে। তখন অভয়াচরণের পুত্র জন্মে নাই । বগলাকে কাণ্ডারী করিয়া ভবানী মকদ্দমার মহাসমুদ্রে পাড়ি দিলেন। বন্দরে আসিয়া লোহার সিন্দুকটি যখন পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন তখন দেখিতে পাইলেন, লক্ষ্মীপেঁচার বাসাটি একেবারে শূন্ত— সামান্ত দুটো-একটা সোনার পালক খসিয়া পড়িয়া আছে। পৈতৃক সম্পত্তি অপর পক্ষের হাতে গেল। আর আলদি তালুকের ষে ডগাটুকু মকদ্দমা-খরচার বিনাশতল হইতে জাগিয়া রহিল, কোনোমতে তাহাকে আশ্রয় করিয়া থাকা চলে মাত্র কিন্তু বংশমর্যাদা রক্ষা করা চলে না। পুরাতন বাড়িটা