পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१७ রবীন্দ্র-রচনাবলী পটল। আমি ছেলেমাহুষি করি, না তুমি বুড়োমামৃষি কর ! তোমার বুঝি বয়সের গাছপাথর নাই ! যতীন পলায়ন করিল। পটল তাহার পিছনে পিছনে ছুটিতে ছুটিতে কহিল, *ও যতীন, তোমার ভয় নাই, তোমার ভয় নাই। এখনই তোমার মালা দিতে হইবে না— ফাগুনচৈত্রে লগ্ন নাই – এখনো হাতে সময় আছে।” পটল যাহাকে কুড়ানি বলিয়৷ ডাকে, সেই মেয়েটি অবাক হইয়া রহিল। তাহার বয়স ষোলো হইবে, শরীর ছিপছিপে— মুখশ্ৰী সম্বন্ধে অধিক কিছু বলিবার নাই, কেবল মুখে এই একটি অসামান্যতা আছে যে দেখিলে যেন বনের হরিণের ভাব মনে আসে। কঠিন ভাষায় তাহাকে নিবুদ্ধি বলা যাইতেও পারে— কিন্তু তাহ বোকামি নহে, তাহা বুদ্ধিবৃত্তির অপরিস্ফুরণমাত্র, তাহাতে কুড়ানির মুখের সৌন্দর্য নষ্ট না করিয়া বরঞ্চ একটি বিশিষ্টতা দিয়াছে । সন্ধ্যাবেলায় হরকুমারবাবু কলিকাতা হইতে ফিরিয়া আসিয়া যতীনকে দেখিয়৷ কহিলেন, “এই যে, যতীন আসিয়াছ, ভালোই হইয়াছে। তোমাকে একটু ডাক্তারি করিতে হইবে । পশ্চিমে থাকিতে দুভিক্ষের সময় আমরা একটি মেয়েকে লইয়া মানুষ করিতেছি— পটল তাহাকে কুড়ানি বলিয়া ডাকে। উহার বাপ-মা এবং ওই মেয়েটি আমাদের বাংলার কাছেই একটি গাছতলায় পড়িয়া ছিল। যখন খবর পাইয়া গেলাম, গিয়া দেখি, উহার বাপ-মা মরিয়াছে, মেয়েটির প্রাণটুকু আছে মাত্র। পটল তাহাকে অনেক যত্নে বঁাচাইয়াছে। উহার জাতের কথা কেহ জানে না— তাহা লইয়া কেহ আপত্তি করিলেই পটল বলে, ‘ও তো দ্বিজ ; একবার মরিয়া এবার আমাদের ঘরে জন্মিয়াছে, উহার সাবেক জাত কোথায় ঘুচিয়া গেছে।’ প্রথমে মেয়েটি পটলকে ম৷ বলিয়া ডাকিতে শুরু করিয়াছিল ; পটল তাহাকে ধমক দিয়া বলিল, “খবরদার, অামাকে মা বলিস নে – আমাকে দিদি বলিস। পটল বলে, ‘অতবড়ো মেয়ে মা বলিলে নিজেকে বুড়ি বলিয়া মনে হইবে যে বোধ করি সেই দুভিক্ষের উপবাসে বা আর-কোনো কারণে উহার থাকিয়া-থাকিয়া শূলবেদনার মতে হয়। ব্যাপারখানা কী তোমাকে ভালো করিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে । ওরে তুলসি, কুড়ানিকে ডাকিয়া আন তো।” কুড়ানি চুল র্বাধিতে বাধিতে অসম্পূর্ণ বেণী পিঠের উপরে দুলাইয়া হরকুমারবাবুর ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার হরিণের মতো চোখদুটি দুজনের উপর রাখিয়া সে চাহিয়া রহিল । যতীন ইতস্তত করিতেছে দেখিয়া হরকুমার তাহাকে কহিলেন, “বৃথা সংকোচ