পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१8 রবীন্দ্র-রচনাবলী লোককে জানাইয়া দেয় যে, বউ আছে বটে। আর তুমি যে মাঠের দিকে তাকাইয়া ভান করিতেছ, যেন কার চাদমুখ ধ্যান করিতে বসিয়াছ, এ-সমস্ত চালাকি আমি কি বুঝি না - ও কেবল লোক দেখাইবার ভড়ং মাত্র। দেখে যতীন, চেনা বামুনের পৈতের দরকার হয় না— আমাদের ওই ধনাটা তো কোনোদিন বিরহের ছুতা করিয়া মাঠের দিকে অমন তাকাইয়া থাকে না ; অতিবড়ো বিচ্ছেদের দিনেও গাছের তলায় নিড়ানি হাতে উহাকে দিন কাটাইতে দেখিয়াছি— কিন্তু উহার চোখে তো আমন ঘোর-ঘোর ভাব দেখি নাই। আর তুমি মশায়, সাতজন্ম বউয়ের মুখ দেখিলে না— কেবল হাসপাতালে মড়া কাটিয়া ও পড়া মুখস্থ করিয়া বয়স পার করিয়া দিলে, তুমি অমনতরো দুপুরবেলা আকাশের দিকে গদগদ হইয়া তাকাইয়া থাক কেন । না, এ-সমস্ত বাজে চালাকি আমার ভালো লাগে না । আমার গা জাল করে।” যতীন হাতজোড় করিয়া কহিল, “থাকৃ থাকৃ, আর নয়। অামাকে আর লজ্জা দিয়ে না । তোমাদের ধনাই ধন্য । উহারই আদর্শে আমি চলিতে চেষ্টা করিব । আর কথা নয়, কাল সকালে উঠিয়াই যে কাঠকুড়ানি মেয়ের মুখ দেখিব, তাহারই গলায় মালা দিব— ধিক্কার আমার আর সহ হইতেছে না।” পটল । তবে এই কথা রহিল ? যতীন । হা, রহিল। পটল । তবে এসে । যতীন। কোথায় যাইব । পটল । এসোই-না । যতীন। না না, একটা কী দুষ্টুমি তোমার মাথায় আসিয়াছে। আমি এখন নড়িতেছি না । পটল । আচ্ছা, তবে এইখানেই বোসো — বলিয়া সে দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। পরিচয় দেওয়া যাক। যতীন এবং পটলের বয়সের একদিন মাত্র তারতম্য। পটল যতীনের চেয়ে একদিনের বড়ো বলিয়া যতীন তাহার প্রতি কোনোপ্রকার সামাজিক সন্মান দেখাইতে নারাজ। উভয়ে খুড়তুতো-জাঠতুতে ভাইবোন। বরাবর একত্রে খেলা করিয়া আসিয়াছে। ‘দিদি বলে না বলিয়া পটল যতীনের নামে বাল্যকালে বাপ-খুড়ার কাছে অনেক নালিশ করিয়াছে, কিন্তু কোনো শাসনবিধির স্বারা কোনো ফুল পায় নাই— একটিমাত্র ছোটো ভাইয়ের কাছেও তাহার পটল-নাম ঘুচিল না। পটল দিব্য মোটাসোটা গোলগাল, প্রফুল্লতার রসে পরিপূর্ণ। তাহার কৌতুকহাস্য