পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ সদর ও অন্দর বিপিনকিশোর ধনীগৃহে জন্মিয়াছিলেন, সেইজন্য ধন যে পরিমাণে ব্যয় করিতে জানিতেন তাহার অর্ধেক পরিমাণেও উপার্জন করিতে শেখেন নাই। স্বতরাং যে গৃহে জন্ম সে গৃহে দীর্ঘকাল বাস করা ঘটিল না। স্বন্দর স্বকুমারমূর্তি তরুণ যুবক, গানবাজনায় সিদ্ধহস্ত, কাজকর্মে নিরতিশয় অপটু ; সংসারের পক্ষে সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। জীবনযাত্রার পক্ষে জগন্নাথদেবের রথের মতো অচল ; যেরূপ বিপুল আয়োজনে চলিতে পারেন সেরূপ আয়োজন সম্প্রতি বিপিনকিশোরের আয়ত্তাতীত । সৌভাগ্যক্রমে রাজা চিত্তরঞ্জন কোর্ট অফ ওয়ার্ডস হইতে বিষয় প্রাপ্ত হইয়া শখের থিয়েটার ফাদিবার চেষ্টা করিতেছেন এবং বিপিনকিশোরের সুন্দর চেহারা ও গান গাহিবার ও গান তৈয়ারি করিবার ক্ষমতায় মুগ্ধ হইয়া, তাহাকে সাদরে নিজের অমুচরশ্রেণীতে ভুক্ত করিয়া লইয়াছেন। রাজা বি. এ. পাস। র্তাহার কোনোপ্রকার উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল না। বড়োমানুষের ছেলে হইয়াও নিয়মিত সময়ে এমন-কি নির্দিষ্ট স্থানেই শয়ন ভোজন করিতেন। বিপিনকিশোরকে হঠাৎ তাহার নেশার মতো লাগিয়া গেল। র্তাহার গান শুনিতে ও তাহার রচিত গীতিনাট্য আলোচনা করিতে করিতে ভাত ঠাণ্ড হইতে থাকে, রাত বাড়িয়া যায়। দেওয়ানজি বলিতে লাগিলেন, র্তাহার সংযতস্বভাব মনিবের চরিত্রদোষের মধ্যে কেবল ঐ বিপিনকিশোরের প্রতি আতিশয় আসক্তি । রানী বসন্তকুমারী স্বামীকে তর্জন করিয়া বলিলেন, “কোথাকার এক লক্ষ্মীছাড়া বানর আনিয়া শরীর মাটি করিবার উপক্রম করিয়াছে, ওটাকে দূর করিতে পারিলেই আমার হাড়ে বাতাস লাগে।” রাজা যুবতী স্ত্রীর ঈর্ষায় মনে মনে একটু খুশি হইতেন, হাসিতেন ; ভাবিতেন, মেয়েরা যাহাকে ভালোবাসে কেবল তাহাকেই জানে। জগতে যে আদরের পাত্র অনেক গুণী আছে, স্ত্রীলোকের শাস্ত্রে সে কথা লেখে না । যে লোক তাহার কানে