পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৩৭ উমাপদ কহিল, “নিশ্চয় এরা ভুল করেছে।” „r কিন্তু, আর চাপা রহিল না। কিছুকাল হইতে উমাপদ এইরূপ ফাকি দিয়া আসিতেছে। কেবল কাগজ সম্বন্ধে নহে, ভূপতির নামে উমাপদ বাজারে অনেক দেনা করিয়াছে। গ্রামে সে যে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করিতেছে তাহার মালমসলার কতক ভূপতির নামে লিখাইয়াছে, অধিকাংশই কাগজের টাকা হইতে শোধ করিয়াছে। যখন নিতান্তই ধরা পড়িল তখন সে রুক্ষ স্বরে কহিল, “আমি তো আর নিরুদেশ হচ্ছি নে। কাজ করে আমি ক্রমে ক্রমে শোধ দেব— তোমার সিকি পয়সার দেনা যদি বাকি থাকে তবে আমার নাম উমাপদ নয় ।” তাহার নামের ব্যত্যয়ে ভূপতির কোনো সাস্তুনা ছিল না। অর্থের ক্ষতিতে ভূপতি তত ক্ষুন্ন হয় নাই, কিন্তু অকস্মাৎ এই বিশ্বাসঘাতকতায় সে যেন ঘর হইতে শূন্যের মধ্যে পা ফেলিল । 曝 সেইদিন সে অকালে অন্তঃপুরে গিয়াছিল। পৃথিবীতে একটা যে নিশ্চয় বিশ্বাসের স্থান আছে, সেইটে ক্ষণকালের জন্য অনুভব করিয়া আসিতে তাহার হৃদয় ব্যাকুল হইয়াছিল। চারু তখন নিজের দুঃখে সন্ধ্যাদীপ নিবাইয়া জানলার কাছে অন্ধকারে বসিয়া ছিল । উমাপদ পরদিনই ময়মনসিংহে যাইতে প্রস্তুত। বাজারের পাওনাদাররা খবর পাইবার পূর্বেই সে সরিয়া পড়িতে চায়। ভূপতি ঘৃণাপূর্বক উমাপদর সহিত কথা কহিল না— ভূপতির সেই মৌনাবস্থা উমাপদ সৌভাগ্য বলিয়া জ্ঞান করিল। অমল আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মন্দা-বোঠান, এ কী ব্যাপার। জিনিসপত্র গোছাবার ধুম যে ?” মন্দা। আর ভাই, যেতে তো হবেই। চিরকাল কি থাকব । অমল । যাচ্ছ কোথায় । মন্দা । দেশে । অমল । কেন। এখানে অসুবিধাটা কী হল। মন্দা। অম্‌বিধে আমার কী বল। তোমাদের পাচজনের সঙ্গে ছিলুম, স্থখেই ছিলুম। কিন্তু অন্যের অসুবিধে হতে লাগল যে। বলিয়া চারুর ঘরের দিকে কটাক্ষ করিল। অমল গম্ভীর হইয়া চুপ করিয়া রহিল। মন্দা কহিল, “ছি ছি, কী লজ্জা । বাবু কী মনে করলেন ।” २२> १