পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీy: রবীন্দ্র-রচনাবলী ভবানীচরণ সর্বপ্রকার ত্যাগস্বীকার করিতেই প্রস্তুত— কিন্তু সে দিকে ভারি কড়াক্কড়। দ্বিয়ের দর বাড়িতেছে তবু লুচির সংখ্যা ঠিক সমানই আছে। মধ্যাহভোজনে পায়সটা যখন আছেই তখন দুইটা না দিলে কোনো ক্ষতিই হয় না— কিন্তু বাহুল্য হইলেও এ বাড়িতে বাবুরা বরাবর দই পায়স খাইয়া আসিয়াছেন। কোনোদিন ভবানীচরণের ভোগে সেই চিরন্তন দধির অনটন দেখিলে রাসমণি কিছুতেই তাহা সহ করিতে পারেন না। অতএব গায়ে-হাওয়া-লাগানো সেই মেমমূর্তিটি ভবানীচরণের দই-পায়স-ঘি-লুচির কোনো ছিদ্রপথ দিয়া যে প্রবেশ করিবে এমন উপায় দেখা গেল না । ভবানীচরণ র্তাহার গুরুপুত্রের বাসায় একদিন যেন নিতান্ত অকারণেই গেলেন এবং বিস্তর অপ্রাসঙ্গিক কথার পর সেই মেমের খবরটা জিজ্ঞাসা করিলেন। র্তাহার বর্তমান আর্থিক দুৰ্গতির কথা বগলাচরণের কাছে গোপন থাকিবার কোনো কারণ নাই তাহা তিনি জানেন, তবু আজ তাহার ট্রাক নাই বলিয়৷ ওই একটা সামান্ত খেলনা তিনি তাহার ছেলের জন্য কিনিতে পারিতেছেন না, এ কথার আভাস দিতেও তাহার যেন মাথা ছিড়িয়া পড়িতে লাগিল। তবু দুঃসহ সংকোচকেও অধ:কৃত করিয়া তিনি তাহার চাদরের ভিতর হইতে কাপড়ে-মোড়া একটি দামী পুরাতন জামিয়ার বাহির করিলেন। রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠে কহিলেন, “সময়টা কিছু খারাপ পড়িয়াছে, নগদ টাকা হাতে বেশি নাই— তাই মনে করিয়াছি, এই জামিয়ারটি তোমার কাছে বন্ধক রাখিয়া সেই পুতুলটা কালীপদর জন্য লইয়া যাইব ।” জামিয়ারের চেয়ে অল্প দামের কোনো জিনিস যদি হইত তবে বগলাচরণের বাধিত না— কিন্তু সে জানিত এটা হজম করিয়া উঠিতে পারিবে না— গ্রামের লোকেরা তো নিন্দ করিবেই, তাহার উপরে রাসমণির রসনা হইতে যাহা বাহির হইবে তাহা সরস হইবে না। জামিয়ারটাকে পুনরায় চাদরের মধ্যে গোপন করিয়া হতাশ হইয়৷ ভবানীচরণকে ফিরিতে হইল । 衅 * 曾 কালীপদ পিতাকে রোজ জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, আমার সেই মেমের কী হইল।” ভবানীচরণ রোজই হাসিমুখে বলেন, “রোস— এখনি কী। সপ্তমী পূজার দিন আগে আসুক।” প্রতিদিনই মুখে হাসি টানিয়া আন দুঃসাধ্যকর হইতে লাগিল । আজ চতুর্থ। ভবানীচরণ অসময়ে অন্তঃপুরে কী একটা ছুতা করিয়া গেলেন। যেন হঠাৎ কথাপ্রসঙ্গে রাসমণিকে বলিয়া উঠিলেন, “দেখো, আমি কয়দিন হইতে লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, কালীপদর শরীরটা যেন দিনে দিনে খারাপ হইয়া যাইতেছে।”