পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী م لأ8 তখন সে ইচ্ছা করিলে যেটা খুশি লইতে পারিত, কিন্তু সংকোচে কোনোটাই লইত না ; রসিক নিজের পছন্দমত জিনিসটি তাহাকে তুলিয়া দিত। পুতুলগড়ার পর্ব শেষ হইলে যখন হার্মোনিয়ম বাজাইবার দিন আসিল তখন পাড়ার ছেলেমেয়েরা সকলেই এই যন্ত্রটা টেপাটুপি করিবার জন্য ঝুকিয়া পড়িত— রসিক তাহাদের সকলকেই হুংকার দিয়া খেদাইয়া রাখিত। সৌরভী কোনো উৎপাত করিত না— সে তাহার ডুরে শাড়ি পরিয়া বড়ে বড়ো চোখ মেলিয়া বামহাতের উপর শরীরটার ভর দিয়া হেলিয়া বসিয়া চুপ করিয়া আশ্চর্য হইয়া দেখিত। রসিক ডাকিত, ‘আয় সৈরি, একবার টিপিয়া দেখ । সে মৃদ্ধ মুছ হাসিত, অগ্রসর হইতে চাহিত না। রসিক অসন্মতিসত্বেও নিজের হাতে তাহার আঙল ধরিয়া তাহাকে দিয়া বাজাইয়া লইত। সৌরভীর দাদা গোপালও রসিকের ভক্তবৃন্দের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ছিল। সৌরভীর সঙ্গে তাহার প্রভেদ এই যে, ভালো জিনিস লইবার জন্ত তাহাকে কোনোদিন সাধিতে হইত না । সে আপনি ফরমাশ করিত এবং না পাইলে অস্থির করিয়া তুলিত। নূতনগোছের যাহা-কিছু দেখিত তাহাই সে সংগ্ৰহ করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিত। রসিক কাহারো আবদার বড়ো সহিতে পারিত না, তবু গোপাল যেন অন্য ছেলেদের চেয়ে রসিকের কাছে কিছু বেশি প্রশ্রয় পাইত। বংশী মনে মনে ঠিক করিল, এই সৌরভীর সঙ্গেই রসিকের বিবাহ দিতে হইবে। কিন্তু সৌরভীর ঘর তাহাদের চেয়ে বড়ো— পাচশো টাকার কমে কাজ হইবার আশা मांझे । २ এতদিন বংশী কখনো রসিককে তাহার তাতবোনায় সাহায্য করিতে অনুরোধ করে নাই। খাটুনি সমস্তই সে নিজের ঘাড়ে লইয়াছিল । রসিক নানাপ্রকার বাজে কাজ লইয়া লোকের মনোরঞ্জন করিত ইহা তাহার দেখিতে ভালোই লাগিত। রসিক ভাবিত, ‘দাদা কেমন করিয়া ষে রোজই এই এক তাতের কাজ লইয়া পড়িয়া থাকে কে জানে। আমি হইলে তো মরিয়া গেলেও পারি না।’ তাহার দাদা নিজের সম্বন্ধে নিতান্তই টানাটানি করিয়া চালাইত, ইহাতে সে দাদাকে কৃপণ বলিয়া জানিত । তাহার দাদার সম্বন্ধে রসিকের মনে যথেষ্ট একটা লজ্জা ছিল । শিশুকাল হইতেই সে নিজেকে তাহার দাদা হইতে সকল বিষয়ে ভিন্ন শ্রেণীর লোক বলিয়াই জানিত । তাহার দাদাই তাহার এই ধারণাকে প্রশ্রয় দিয়া আসিয়াছে । এমন সময়ে বংশী নিজের বিবাহের আশা বিসর্জন দিয়া রসিকেরই বধূ জানিবার