পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• পারস্তে ৪৬১ একটি বিশেষ ইচ্ছা মনে নিয়ে চোখ বুজে এই গ্রন্থ খুলে যে কবিতাটি বেরবে তার থেকে ইচ্ছার সফলতা নির্ণয় হবে। কিছু আগেই গবর্নরের সঙ্গে যে বিষয় আলোচনা করেছিলুম সেইটেই মনে জাগছিল। তাই মনে মনে ইচ্ছা করলুম ধর্মনামধারী অন্ধতার প্রাণাস্তিক ফাস থেকে ভারতবর্ষ যেন মুক্তি পায়। যে পাতা বেরল তার কবিতাকে দুই ভাগ করা যায়। ইরানী ও কয়জনে মিলে যে তর্জমা করেছেন তাই গ্রহণ করা গেল। প্রথম অংশের প্রথম শ্লোকটি মাত্র দিই। কবিতাটিকে রূপকভাবে ধরা হয়, কিন্তু সরল অর্থ ধরলে সুন্দরী প্রেয়সীই কাব্যের উদ্দিষ্ট । প্রথম অংশ। মুকুটধারী রাজারা তোমার মনোমোহন চক্ষুর দাস, তোমার কণ্ঠ থেকে যে স্বধা নিঃস্থত হয় জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমানেরা তার দ্বারা অভিভূত। দ্বিতীয় অংশ। স্বৰ্গদ্বার যাবে খুলে, আর সেইসঙ্গে খুলবে আমাদের সমস্ত জটিল ব্যাপারের গ্রন্থি, এও কি হবে সম্ভব। অহংকৃত ধাৰ্মিকনামধারীদের জন্তে যদি তা বন্ধই থাকে তবে ভরসা রেখে মনে ঈশ্বরের নিমিত্তে তা যাবে খুলে। বন্ধুরা প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরের সংগতি দেখে বিস্মিত হলেন। এই সমাধির পাশে বসে আমার মনের মধ্যে একটা চমক এসে পৌছল, এখানকার এই বসন্তপ্রভাতে স্বর্ষের আলোতে দূরকালের বসন্তদিন থেকে কবির হাস্তোজ্জল চোখের সংকেত। মনে হল আমরা দুজনে একই পানশালার বন্ধু, অনেকবার নানা রসের অনেক পেয়াল ভরতি করেছি। আমিও তো কতবার দেখেছি আচারনিষ্ঠ ধামিকদের কুটিল ভ্ৰকুট । তাদের বচনজালে আমাকে বাধতে পারে নি ; আমি পলাতক, ছুটি নিয়েছি অবাধপ্রবাহিত আনন্দের হাওয়ায়। নিশ্চিত মনে হল আজ, কত-শত বৎসর পরে জীবনমৃত্যুর ব্যবধান পেরিয়ে এই কবরের পাশে এমন একজন মুসাফির এসেছে যে মানুষ হাফেজের চিরকালের জানা লোক । ভরপুর মন নিয়ে বাগানবাড়িতে এলুম। যার বাড়ি তার নাম শিরাজী। কলকাতায় ব্যাবসা করেন। তারই ভাইপো খলিলী আতিথ্যভার নিয়েছেন। পরিষ্কার নতুন বাড়ি, সামনেট খোলা, অদূরে একটি ছোটো পাহাড়। কাচের শাসির মধ্যে দিয়ে প্রচুর আলো এসে স্থসজ্জিত ঘর উজ্জল করে রেখেছে। প্রত্যেক ঘরেই ছোটে ছোটো টেবিলে বাদাম কিশমিশ, মিষ্টান্ন সাজানো। চ। খাওয়া হলে পর এখানকার গান-বাজনার কিছু নমুনা পেলুম। একজনের হাতে কামুন, একজনের হাতে সেতারজাতীয় বাজনা, গায়কের হাতে তাল দেবার যন্ত্ৰ— বায়া-তবলার একত্রে মিশ্রণ। সংগীতের তিনটি ভাগ। প্রথম অংশটা চটুল, মধ্য २२७s