পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারস্তে 835 নিহাবদের রণক্ষেত্রে সাসানীয় সাম্রাজ্য আরবদের হাতে লীলা সমাপন করে। সেইদিন বহুকালীন প্রাচীন পারস্তের ইতিহাসে হঠাৎ সম্পূর্ণ নূতন অধ্যায় শুরু হল। অবশেষে আমাদের রাস্তা এসে পড়ল বেহিস্তনে। এখানে শৈলগাত্রে দরিয়ুসের কীতিলিপি পারসিক স্বসীয় ও ব্যাবিলোনীয় ভাষায় ক্ষোদিত। এই ক্ষোদিত ভাষার উর্ধ্বে দরিয়ুসের মূর্তি। এই মূতির সামনে বন্দীবেশে দশজন বিদ্রোহীর প্রতিরূপ। এরা তার সিংহাসন-অধিরোহণে বাধা দিয়েছিল। দরিয়ুসের পূর্ববর্তী রাজা ক্যাম্বাইসিস ( পারসিক উচ্চারণ কাম্ব্যোজ্যিয় ) ঈর্ষাবশত গোপনে তার ভ্রাতা স্মদিসকে হত্যা করিয়েছিলেন। যখন তিনি ঈজিপ্ট-অভিধানে তখন র্তার অনুপস্থিতিকালে সৌমতে বলে এক ব্যক্তি নিজেকে স্মদিস নামে প্রচার করে সিংহাসন দখল করে বসে। ক্যাম্বাইসিস ঈজিপ্ট থেকে ফেরবার পথে মারা যান। তখন আকেমেনীয় বংশের অপরশাখাভূক্ত দরিয়ুস ছদ্মরাজাকে পরাস্ত করে বন্দী করেন। প্রতিমূতিতে ভূমিশাস্ত্রী সেই মূতির বুকে দরিয়ুসের পা, বন্দী উধ্যে দুই হাত তুলে ক্ষমা ভিক্ষা করছে। দরিয়ুসের মাথার উপরে অহুরমজ দার মূতি । অধ্যাপক হর্টজ ফেলড বলেন, সম্প্রতি একটি শিলালিপি বেরিয়েছে তাতে দরিয়ুস জানাচ্ছেন, তিনি যখন সিংহাসনে বসেন তখন তার পিতা পিতামহ উভয়েই বর্তমান । এই প্রথাবিরুদ্ধ ব্যাপার কী করে সম্ভব হল তার কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। সমুদ্রের মাঝে মাঝে এক-একটা দ্বীপ দেখা যায় যা ভূমিকম্পের হাতে তৈরি। তার সর্বত্র গলিত ধাতু আর অগ্নিস্রাবের চিহ্ন। তেমনি বহুযুগ ধরে ইতিহাসের ভূমিকম্পে এবং অগ্নি-উদগীরণে পারস্তের জন্ম। প্রাচীনকাল থেকে পারস্তে সাম্রাজ্য স্থষ্টি হয়ে এসেছে। মানুষের ইতিহাসে সব চেয়ে পুরাতন মহাসাম্রাজ্য সাইরাস স্থাপন করেন, তার পরেও দীর্ঘকাল পারস্তের ইতিহাসক্ষেত্রে সাম্রাজ্যিক দ্বন্দ্ব। তার প্রধান কারণ, পারস্যের চারি দিকেই বড়ো বড়ে প্রাচীন রাজশক্তির স্থান। হয় তাদের সকলকে দমন করে রাখতে হবে, নয় তাদের কেউ-না-কেউ এসে পারস্তকে গ্রাস করবে। নানা জাতির সঙ্গে এই নিরস্তর দ্বন্দ্ব থেকেই পারস্যের ঐতিহাসিক বোধ, ঐতিহাসিক সত্তা এত প্রবল হয়ে উঠেছে। ভারতবর্ষ সমাজ স্বষ্টি করেছে, মহাজাতির ইতিহাস স্বষ্টি করে নি। আর্যের সঙ্গে অনার্যের দ্বন্দ্ব প্রধানত সামাজিক। অপেক্ষাকৃত অল্পসংখ্যক আর্য বহুসংখ্যক অনার্যের মাঝখানে পড়ে নিজের সমাজকে বাচাতে চেয়েছিলেন। রামের সঙ্গে রাবণের যুদ্ধ রাষ্ট্রজয়ের নয়, সমাজরক্ষার— সীতা সেই সমাজনীতির প্রতীক। রাবণ সীতাহরণ করেছিল, রাজ্যহরণ করে নি। মহাভারতেও । বস্তুত সমাজনীতির দ্বন্দ্ব, এক পক্ষ কৃষ্ণকে স্বীকার করেছে, কৃষ্ণাকে পণ রেখে তাদের