পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার স্নেহাস্পদ ছাত্র শ্ৰীমান প্রমথনাথ বিশীর কোনো রচনা হইতে এই নাট্যদৃপ্তের ভাবটি আমার মনে আসিয়াছিল । ১ নাগরিক। মহাকালের রথযাত্রায় এবার যে রথ অচল হয়ে রইল। কিছুতেই নড়লেন না। কার দোষে হল তা জানি, গণৎকার গুনে বলে দিয়েছেন। ২ নাগরিক। হয়তো কারো দোষ নেই, হয়তো মহাকাল ক্লাস্ত, আর চলতে রাজি নন। ১ নাগরিক। আরে বল কী। চলতে রাজি না হলে আমাদের চলবে কী করে । ওই দেখো-না, রথের দড়িটা পড়ে আছে, কত যুগের দড়ি– কত মানুষের হাত পড়েছে ওই দড়িতে, এমন করে তো কোনোদিন ধুলোয় পড়ে থাকে নি । ৩ নাগরিক। রথ যদি না চলে, আর ওই দড়ি যদি পড়ে থাকে, তা হলে ও যে সমস্ত রাজ্যের গলায় দড়ি হবে । ৪ নাগরিক। বাবা রে, ওই দড়িটা দেখে ভয় লাগছে, মনে হচ্ছে ও যেন ক্রমে ক্রমে সাপ হয়ে ফণা ধরে উঠবে। ৩ নাগরিক। দেখ-ন ভাই, একটু একটু যেন নড়ছে মনে হচ্ছে । ১ নাগরিক। আমরা যদি না নড়াতে পারি, ও যদি আপনি নড়ে ওঠে, তা হলে যে সর্বনাশ হবে। ৩ নাগরিক। তা হলে জগতের সব জোড়গুলো বিজোড় হয়ে উঠবে রে । তা হলে রথটা চলবে আমাদের বুকের পাজরের উপর দিয়ে। আমরা ওকে নিজে চালাই বলেই তো ওর চাকার তলায় পড়ি নে। এখন উপায় ? ১ নাগরিক। ওই দেখ-না, পুরুতঠাকুর বসে মন্ত্র পড়ছে। ২ নাগরিক। রথযাত্রায় সব আগেই ওই পুরুতষ্ঠাকুরের দলরাই তো দড়ি ধরে প্রথম টানটা দিয়ে থাকেন। এবার কি শুধু মন্ত্র পড়েই কাজ সারবেন নাকি। ৪ নাগরিক। চেষ্টার ক্রাট হয় নি। ভোরের বেলা সেই অন্ধকার থাকতে সবার আগে ওঁরাই তো একচেটি টানাটানি করে নিয়েছেন। কলিযুগে ওঁদের কি আর তেজ অাছে রে । ৩ নাগরিক। ওই দেখ, আমার কেমন মনে হচ্ছে ওই রশিটা যেন যুগ-যুগান্তরের নাড়ীর মতে দব দব করছে। २२||> २