পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ৩২১ জীবনের সমস্ত দাহকে যেন আমি রেখে যেতে পারি। হায় ! প্রলাপ | সমস্তই প্ৰলাপ! অভিশাপের কোনো বলই নেই। আমার মৃত্যু কেবল আমাকেই শেষ করে দেবে— আর কারো গায়ে হাত দিতে পারবে না। আ:-- তারা আমার জীবনটাকে একেবারে ছারখার করে দিলে, আর আমি মরেও তাদের কিছুই করতে পারলেম না। তাদের কোনো ক্ষতি হবে না— তারা সুখে থাকবে, তাদের দাতমাজ হতে আরম্ভ করে মশারি-ঝাড়া পর্যন্ত কোনো তুচ্ছ কাজটিও বন্ধ থাকবে না— অথচ আমার স্থৰ্য-চন্দ্র-নক্ষত্রের সমস্ত আলোক এক ফুৎকারে নিবল— আমার নেলি - উঃ, ও নাম নয় । ও কে ও ! হরেন । সন্ধ্যার সময় বাগানে বার হয়েছে যে ! বাপ-মাকে লুকিয়ে চুরি করে কাচা পেয়ারা পাড়তে এসেছে। ওর আকাজক্ষা ওই কাচা পেয়ারার চেয়ে আর অধিক উর্ধ্বে চড়ে নি— ওই গাছের নিচু ডালেই ওর অধিকাংশ মুখ ফলে আছে। পৃথিবীতে ওর জীবনের কী মূল্য । গাছের একটা কাচা পেয়ারা যেমন, এ সংসারে ওর কাচা জীবনটাই বা তার চেয়ে কী এমন বড়ে । এখনি যদি ছিন্ন করা যায় তবে জীবনের কত নৈরাপ্ত হতে ওকে বাচানো যায় তা কে বলতে পারে। আর মাসিমা— ই ! একেবারে লুটাপুটি করতে থাকবে। আঃ! ঠিক সময়টি, ঠিক স্থানটি, ঠিক লোকটি। হাতকে অার সামলাতে পাচ্ছি নে । হাতটাকে নিয়ে কী করি । হাতটাকে নিয়ে কী করা যায়। ছড়ি লইয়া সতীশ সবেগে চারাগাছগুলিকে ক্রমাগত আঘাত করিতে লাগিল । তাহাতে তাহার উত্তেজনা ক্রমশ আরো বাড়িয়া উঠিতে লাগিল। জবশেষে নিজের হাতকে সে সবেগে আঘাত করিল ; কিন্তু কোনো বেদন বোধ করিল না। শেষে পকেটের ভিতর হইতে পিস্তল সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া সে হয়েনের দিকে সবেগে অগ্রসর হইতে লাগিল । হরেন। ( চমকিয়া উঠিয়া ) এ কী ! দাদা নাকি । তোমার দুটি পায়ে পড়ি দাদা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি — বাবাকে বলে দিয়ে না। সতীশ । ( চীৎকার করিয়া) মেসোমশায়— মেসোমশায়— এইবেল রক্ষা করো – আর দেরি কোরো না— তোমার ছেলেকে এখনো রক্ষা করো। শশধর। ( ছুটিয়া আসিয়া ) কী হয়েছে সতীশ । কী হয়েছে। স্বকুমারী। (ছুটিয়া আসিয়া ) কী হয়েছে, আমার বাছার কী হয়েছে।