পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ אoצ ט পূজার কিছু পূর্বে কলিকাতা হইতে নানাপ্রকার চোখ-ভোলানো সস্ত৷ শৌখিন জিনিস আনাইয়া কয়েক মাসের জন্য ব্যাবসা চালাইয়া থাকেন। অদৃপ্ত কালি, ছিপ-ছড়িছাতার একত্র সমবায়, ছবি-আঁকা চিঠির কাগজ, নিলামে-কেন। নানা রঙের পচা রেশম ও সাটিনের থান, কবিতা-লেখা পাড়ওয়ালা শাড়ি প্রভৃতি লইয়া তিনি গ্রামের নরনারীর মন উতলা করিয়া দেন। কলিকাতার বাবুমহলে আজকাল এই সমস্ত উপকরণ না হইলে ভদ্রত রক্ষা হয় না শুনিয়া গ্রামের উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিমাত্রই আপনার গ্রাম্যতা ঘুচাইবার জন্য সাধ্যাতিরিক্ত ব্যয় করিতে ছাড়েন না । একবার বগলাচরণ একটা অত্যাশ্চর্য মেমের মূতি আনিয়াছিলেন। তার কোনএক জায়গায় দম দিলে মেম চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইয়া প্রবল বেগে নিজেকে পাখা করিতে থাকে । এই বীজনপরায়ণ গ্রীষ্মকাতর মেমমূর্তিটির প্রতি কালীপদর অত্যন্ত লোভ জন্মিল। কালীপদ তাহার মাকে বেশ চেনে, पूंजछ মার কাছে কিছু না বলিয়া ভবানীচরণের কাছে করুণকণ্ঠে আবেদন উপস্থিত করিল। ভবানীচরণ তখনি উদারভাবে তাহাকে আশ্বস্ত করিলেন, কিন্তু তাহার দাম শুনিয়া তাহার মুখ শুকাইয়া গেল। টাকাকড়ি আদায়ও করেন রাসমণি, তহবিলও তাহার কাছে, খরচও তাহার হাত দিয়াই হয়। ভবানীচরণ ভিখারির মতো তাহার অন্নপূর্ণার দ্বারে গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রথমে বিস্তর অপ্রাসঙ্গিক কথা আলোচনা করিয়া অবশেষে এক সময়ে ধ। করিয়া আপনার মনের ইচ্ছাটা বলিয়। ফেলিলেন । রাসমণি অত্যন্ত সংক্ষেপে বলিলেন, “পাগল হইয়াছ !” ভবানীচরণ চুপ করিয়া খানিকক্ষণ ভাবিতে লাগিলেন। তাহার পরে হঠাৎ বলিয়৷ উঠিলেন, “আচ্ছ। দেখো, ভাতের সঙ্গে তুমি যে রোজ আমাকে ঘি আর পায়স দাও সেটার তো প্রয়োজন নাই।” রাসমণি বলিলেন, “প্রয়োজন নাই তো কী।” ভবানীচরণ কহিলেন, “কবিরাজ বলে, উহাতে পিত্ত বৃদ্ধি হয়।” রাসমণি তীক্ষভাবে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “তোমার কবিরাজ তে সব জানে ৷” # ভবানীচরণ কহিলেন, “আমি তো বলি রাত্রে আমার লুচি বন্ধ করিয়া ভাতের ব্যবস্থা করিয়া দিলে ভালো হয়। উহাতে পেট ভার করে।” রাসমণি কহিলেন, “পেট ভার করিয়া আজ পর্যন্ত তোমার তো কোনো অনিষ্ট হইতে দেখিলাম না। জন্মকাল হইতে লুচি খাইয়াই তো তুমি মানুষ।” २२||२७ ę